আপনজন ডেস্ক: হযরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল ফ্রান্সের শার্লি হেবদো পত্রিকা। তার জেরে তাদের অফিসে বছর পাঁচেক আগে এক ভয়াবগ হামলায় বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি সেই কার্টুন প্রকাশকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষক খুন হন। কিন্তু সেই খুনের পর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সওয়াল করায় প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। সেই প্রতিবাদী দের মধ্যে অন্যতম তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। এবার তুরস্কের এরদোগানকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের ব্যঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি এবদো। বুধবার তাদের নতুন সংখ্যার প্রচ্ছদ ছবিতে এ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
ফ্রান্সের বিতর্কিত কার্টুন পত্রিকা শার্লি এবদোর এমন প্রচ্ছদ প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তুরস্ক। এরদোগানের শীর্ষ প্রেস উপদেষ্টা ফেহরেত্তিন আলতুন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, সাংস্কৃতিক বর্ণবাদ এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা এই প্রকাশনার নিন্দা করি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহীম কালিন টুইটারে বলেছেন, ফরাসি ম্যাগাজিনে আমাদের প্রেসিডেন্টকে জড়িয়ে যে চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে; যেখানে কোনও বিশ্বাস, পবিত্রতা এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, আমরা দৃঢ়ভাবে এর নিন্দা জানাই। তিনি বলেছেন, তারা কেবল নিজেদের অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতার প্রদর্শন করছে। কারও ব্যক্তিগত অধিকারের ওপর আক্রমণ হাস্যরস কিংবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না।
শার্লি হেবদোর প্রচ্ছদে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান একটি সাদা টি-শার্ট এবং অন্তর্বাস পরে বসে আছেন। পাশে হিজাব পরিহিত এক নারী মদের পসরা সাজিয়ে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বনাম তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মধ্যকার প্রবল বিরোধের মধ্যেই শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কার্টুন এরদোগানকে নিয়ে। মহানবী সা.-এর কার্টুন প্রকাশ করে শার্লি হেবদো ম্যাগাজিন ২০১২ সালে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। সেই কার্টুন দেখিয়ে ১৬ অক্টোবর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। পরে তাঁকে হত্যা করে ১৯ বছর বয়সি এক চেচেন যুবক।
এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জানিয়েছিলেন, তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ম্যাক্রোঁকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে এরদোগান আহ্বান জানান, কেউ যেন ফরাসি পণ্য না কেনে। এরপর আরব দুনিয়ার অনেক দেশই ফরাসি জিনিস বয়কট করেছে।
এদিকে ম্যাক্রোঁ বনাম এরদোগানের লড়াই শুধু কার্টুন বা একে অন্যের বিরুদ্ধে তর্কযুদ্ধে সীমাবদ্ধ নেই। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জানিয়েছে, তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এরদোগান ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এরদোগান ম্যাক্রোঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে অপমান করেছেন।
ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফ্রান্স ঐক্যবদ্ধ, ইউরোপও তাই। ইউরোপীয় কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠকে ক্ষমতার ভারসাম্যকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তুরস্ক যাতে ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও স্বার্থ মেনে চলে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মহানবীর সা. কার্টুন প্রদর্শন ঘিরে বিশ্বজুড়ে ফ্রান্সের ইসলামবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে ক্ষোভ দেখা দেয়। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফরাসি পণ্যসামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশ।
পয়গম্বর সম্পর্কে বিতর্কিত কার্টুন প্রদর্শন এবং ইসলামবিরোধী অবস্থানের কারণে চলতি সপ্তাহে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা দরকার বলে মন্তব্য করেন এরদোগান। এর প্রতিবাদে আঙ্কারা থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স। সোমবার ফরাসি পণ্যসামগ্রী বর্জনের ডাক দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তারপর শার্লি হেবদোয় এরদোগানের কার্টুন বের হওয়ায় বিষয়টি নিয় বিতর্ক আরও চরমে উঠেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct