ডা. প্রকাশ মল্লিক: আমার ব্যাগ কোথায় ? তুমি জানো? আমার পেন এখানে নেই কেন? তুমি খুঁজে দাও। আজ সকালে জলখাবারে আমার লুচি-আলুর দম চাই। তুমি করে দেবে। রবিবার সকালে আমার বন্ধুরা আসছে ওদের জন্য খাবার ঠিকমতো রেডি করে রেখো তো! ওরা তোমার হাতের রান্না খেতে খুব ভালোবাসে। তার মধ্যেই চলে বাবার জন্য অফিসের শার্ট রেডি করে দেওয়া বা দাদুর হারিয়ে যাওয়া চশমা খুঁজে দেওয়া।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাকে না হলে আমাদের চলে না, তিনি “মা”। কিন্তু আমরা একবারও ভেবে দেখি না, একটা মানুষ সারাদিন ধরে একনাগাড়ে এই ধরনের কাজগুলি কীভাবে করে চলেছেন।
আর সব কাজগুলিই হয় একেবারে নিখুঁত। ছোট থেকে দেখে আসছি মা তুমি কখনও বিশ্রাম নাও না। ভোর থেকেই ছুটছ। সকালে আমার স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে, সেখান থেকে এসে বাবার টিফিন। তার মধ্যে দাদু আর ঠাম্মার ওবুধগুলো ঠিকমতো গুছিয়ে দিতে তুমি ভোলো না।
এরপর তুমি কোনওমতে নাকে-মুখে গুঁজে দৌড়ও নিজের অফিসে। আমার আর বাবার ব্যাগে টিফিনের প্যাকটা থাকলেও, প্রায়দিনই তোমার ব্যাগে টিফিন নিতে ভূলে যাও। তাই তো দুপুরে মুখে কিছু ওঠে না তোমার। সন্ধ্যে পর্যন্ত কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরা। এরপর শুরু হয় আরেক পর্ব। আমাকে পড়ানো, সেইসঙ্গে চলে রাতের রান্না। এইভাবেই সময় কেটে যায়। শেষ হয় এক-একটা দিন। কিন্তু মা তুমি থামো না।আর তোমার কাজের শেষ হয় না। চলে পরিশ্রম। আচ্ছা মা, তুমি এত কাজ কী করে করো গো?
মেয়েদের এত কাজ একসঙ্গে করার ক্ষমতা লুকিয়ে আছে, তাদের নিজের মস্তিষ্কেই। গবেষণা বলছে, মেয়েদের মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই কার্যক্ষম হয় যে একসঙ্গে অনেক কাজ করতে তাদের কোনও সমস্যাই হয় না। শুধু তাই নয়, মেয়েদের ব্রেনের কর্টেক্স নামক অংশে অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত পৌছে যাওয়ার কারণে আবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই সঙ্গে একই সময়ে একাধিক কাজ নিপুণভাবে করার ক্ষমতাও বাড়ে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জার্নাল অব আযালঝাইমারস ডিজিজ-এ প্রকাশিত এই গবেষণা অনুসারে মেয়েরা যদি চায় তাহলে তাদের মস্তিষ্কের এই অভিনব ক্ষমতাগুলিকে আরও বাড়াতে পারে। আর তার জন্য ডায়েটে কিছ রদবদল করার প্রয়োজন পড়ে।
এক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে যে নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে, সেগুলি হল...
১। কফি কম খাওয়া: এই পানীয়টিতে উপস্থিত ক্যাফেইন বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে ঘুম কমে যায়। সেই সঙ্গে আাজাইটি এবং স্ট্রেস বেড়ে যাওয়ার মতো আশঙ্কাও থাকে।তাই তো ভূলেও দিনে ৪০০ এমজি-র বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ চলবে না।
২। পর্যাপ্ত ঘুম চাই: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কারণ সারাদিনে যে পরিমাণ শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম একজন মেয়ে করে থাকেন, তা একজন ছেলে জীবনেও করতে পারবেন না। তাই তো চিকিৎসকেরা শরীর এবং মস্তিষ্ককে আরাম দিতে মেয়েদের কম করে ৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত, একথা ভূলে গেলে চলবে না যে মস্তিষ্ক ঠিকমতো বিশ্রাম না পেলে ব্রেন পাওয়ার কমতে শুরু করবে। ফলে মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
৩। হজমক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে হবে: ফ্যাট এবং অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাবার খেলে হজম ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবার হজম হতে যেমন সময় নেয় তেমনি শরীরের কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে যেতে শুরু করে। এক কথায় কুঁড়েমি বৃদ্ধি পায়।তাই তো এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
৪। বাদাম খেতে হবে বেশি করে। লাঞ্চ এবং ডিনারের মাঝে যখনই খিদে পাবে তখনই বাদাম বা ড্রাই ফ্রুটস খাবেন। এই ধরনের খাবার ব্রেন এবং শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে দেহের অন্দরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর করে একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫। সাইট্রাস ফল খেতে হবে বেশি করে। কমলালেবু, মুসুম্বি লেবু এবং পাতিলেবু জাতীয় সাইট্রাস ফল বেশি করে খেতে হবে। কারণ এমন ধরনের ফলে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি ডার্ক চকোলেট, ডিম, বিনস, ডাল এবং সবুজ শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। প্রতিদিন যদি এই খাবারগুলি খেতে পারেন,তাহলে আমৃত্যু ব্রেনকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
৬। পরিমাণমতো জল খেতে হবে। মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে জলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুনতে যতই আজব লাগুক না কেন, এ কথার মধ্যে কোনও ভূল নেই যে জল শরীরকে আর্দ্র রাখার মধ্যে দিয়ে দেহ এবং মস্তিষ্ককে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর যদি তুলসি পাতা, লেবু অথবা নিমপাতা সহযোগে জল পান করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই।
৭| শরীরচর্চা মাস্ট। ব্রেন এবং শরীরের সচলতা বজায় রাখতে ডায়েট যেমন বিশেষ ভূমিকা পাল নকরে, তেমনি শরীরচর্চার অবদানকেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কারণ এক্সারসাইজ করার সময় শরীরের অন্দরে যে পরিবর্তন হয়, তা একইসঙ্গে শরীর এবং মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। তাতো দিনে কম করে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct