আপনজন ডেস্ক: পুজোর আগে গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ও এডেড স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বহু প্রতীক্ষিত ট্রান্সফার প্রক্রিয়া অনলাইন পোর্টাল চালুর মাধ্যমে শুরু করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। গত ৭ই অক্টোবর পোর্টালটির উদ্বোধন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী NOC ও মিউচুয়াল হেয়ারিং এর সমস্যা দূর করার নির্দেশ ও দেন। এর আগে এসএসসি অফিসে জমে থাকা মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদনগুলি নিয়ে কয়েক মাস ধরে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছিল আবেদনকারী শিক্ষকদের মধ্যে। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন সব শিক্ষককে নিজের জেলায় বদলি দেওয়া হবে। কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনও ট্রান্সফারের দাবিতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আন্দোলন শুরু করে। তারপরেই শিক্ষামন্ত্রীর এই পদক্ষেপ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পক্ষে যথেষ্টই স্বস্তিদায়ক হবে এমনটাই মনে করছিলেন সংশ্লিষ্ট সবাই।যদিও শিক্ষাকর্মীরা আবেদন করতে না পারায় তারা সমস্যায় পড়েছেন।
তবে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরে মিউচুয়াল ট্রান্সফার iOSMS সাইটের মাধ্যমে চালু হলেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ রাজ্যের মিউচুয়াল ট্রান্সফার করতে ইচ্ছুক বহু শিক্ষক শিক্ষিকার। মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ না করেই এই পোর্টালে আবেদন শুরু হওয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বদলিপ্রার্থীরা দ্বিধাগ্রস্থ। তাদের অভিযোগ, আবেদন করার সময় বেশির ভাগ টিচারদেরই রেজিষ্টার্ড মোবাইল নং-এ ওটিপি আসছে না। শুধু মাত্র মেল আইডিতে ওটিপি আসছে। আবার প্রোফাইল আপডেট করেও অনেকক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কিছুতেই ওটিপি পাচ্ছেন না। বহু জেলার বিদ্যালয় প্রধানরা বহু টিচারের প্রোফাইল আপডেট করে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ আসছে।
আবেদনপ্রার্থীরা বলছেন, মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদনের সময় সহ শিক্ষকের সাথে প্রধান শিক্ষক, বয়েজ স্কুলের সাথে গার্লস স্কুল, বাংলা মিডিয়ামের সাথে হিন্দি মিডিয়ামের ম্যাচিং দেখাচ্ছে। এবিষয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলি সংশোধনের আবেদন করলেও অনলাইন পোর্টালে এখনও পর্যন্ত কোনরকম সংশোধন হয়নি। আবার চালু হওয়া নতুন পোর্টালে নর্মাল সেকশনের সাথে নর্মাল সেকশন এবং এইচএস সেকশনের সাথে এইচএস সেকশনের মিউচুয়াল ট্রান্সফার মিউচুয়ালের আবেদন সীমাবদ্ধ হওয়ায় হাজার হাজার অনার্স/ পিজি টিচাররা মিউচুয়াল ট্রান্সফারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১২ সালের পূর্ববর্তী মিউচুয়াল ট্রান্সফার নোটিশানুযায়ী, একই বেতন স্কেল, একই সাবজেক্ট ও একই পেশাগত যোগ্যতায় থাকা দুজন আবেদনকারী মিউচুয়াল ট্রান্সফার পেলেও নতুন অনলাইন প্রক্রিয়ায় তারা আবেদন করতে পারছেন না। অনলাইন আবেদনে নর্মাল সেকশনের অনার্স/ পিজি টিচারের সাথে পাস/ গ্র্যানজুয়েট টিচারের সাথে মিউচুয়াল ম্যাচিং দেখালেও ভবিষ্যতে পে প্রোটেকশন সংক্রান্ত জটিলতার আশঙ্কার কারণে অনেকেই আবেদন করতে দ্বিধাবোধ করছেন। এবিষয়ে একটি নির্দেশিকা প্রকাশের দাবি উঠছে। কনফারমেশন না হলেও মিউচুয়াল আবেদন করতে পারলেও কোনও সার্কুলার না থাকায় নবনিযুক্তরাও সমস্যায় পরছেন। এছাড়া মিউচ্যুয়াল পোর্টালে কয়েকটি জেলার সব সাবডিভিশন আসছে না।
দীর্ঘ দিন ধরে এসএসসি অফিসে জমা পরা মিউচুয়াল আবেদনের ভিত্তিতে গত ২০ই অক্টোবর ৫১০ জনের একটি রেকোমেন্ডেশন লেটারের লিস্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই লিস্টে অফলাইনে আবেদন করা অনেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নাম না থাকায় তারা বুঝতে পারছেন না শিক্ষা দপ্তর থেকে আরো লিস্ট প্রকাশিত হবে কিনা অথবা কোন সমস্যার জন্য লিস্ট থেকে নাম বাদ গেছে। এবিষয়ে এসএসসি অফিস থেকে একটি সুস্পষ্ট নোটিফিকেশন দেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য জমা হওয়া সমস্ত আবেদন ৭দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এই ট্রান্সফার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, " মিউচুয়াল ট্রান্সফারের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী জয়েন করবেন সেবিষয়ে বিদ্যালয় প্রধানরা কিভাবে জয়েন করাবেন সেবিষয়ে স্কুলগুলির জন্য শিক্ষা দপ্তর থেকে একটি নোটিফিকেশন দরকার।
হুগলি জেলার শ্যামপুর হাইস্কুলের শিক্ষিকা পর্ণা ঘোষাল বলেন, " হু বার চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত ওটিপি না আসায় মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদন করতে পারছি না। "
হাওড়ার বানতুল মেমোরিয়াল হাইস্কুলের সহ শিক্ষক প্রতিক মিত্র বলেন," মিউচুয়াল ট্রান্সফারে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সাথে ম্যাচিং দেখাচ্ছে। আবার হিন্দি মিডিয়ামের সাথে ম্যাচিং হচ্ছে। যা বাস্তবিক অসম্ভব। পোর্টালের এই ধরনের ত্রুটিগুলি শিক্ষা দপ্তরকে অতিশীঘ্রই কারেকশন করতে হবে।যদি অন্য মিডিয়ামের স্কুল নেওয়াই যায় নোটিফিকেশন দিয়ে সকলকে অবগত করতে হবে।"
এবিষয়ে শিক্ষক সংগঠন "অল পোস্ট গ্র্যা জুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন"এর সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, " অনলাইনে ট্রান্সফার শুরুর জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা দফতরকে সাধুবাদ জানাই। মিউচুয়াল ট্রান্সফারের বর্তমান এই সকল জটিলতা ও সমস্যা অতিদ্রুত দূর করা হোক এবং অবিলম্বে স্কুল ও মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর জন্য অনলাইনে সুস্পষ্ট,যথাযথ ও সংশোধিত নির্দেশিকা প্রকাশ করে উন্নত অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে জেনারেল ও ডিস্ট্রিক্ট ট্রান্সফার প্রক্রিয়া শুরু করুক শিক্ষা দফতর।"
সংগঠনের ট্রান্সফার মঞ্চ "অল বেঙ্গল ট্রান্সফার ফোরামের” কনভেনার রুপ ভট্টাচার্য বলেন, " আরো বেশি সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ট্রান্সফারের সুযোগ দিতে তিনজনের মধ্যে ও একাধিকবার মিউচুয়াল প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে। যেহেতু মিউচুয়াল ট্রান্সফারের ফলে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের কোন সমস্যাই হয় না তাই এই দাবি দ্রুত কার্যকরী করা হোক।"
" অল বেঙ্গল ট্রান্সফার ফোরামের অপর কনভেনার সৌভিক রেজ বলেন, " মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য অনলাইনে অতিশীঘ্রই সবধরনের ট্রান্সফার শুরু করতে হবে। স্কুলের মতো মাদ্রাসার ট্রান্সফার প্রক্রিয়া চালু করা অবশ্যই দরকার। আগামী ৬ই নভেম্বর এবিটিএফ সকলের জন্য জেনারেল ও ডিস্ট্রিক্ট ট্রান্সফার শুরুর দাবিতে বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন দিচ্ছে। "
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct