প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কীভাবে সফল হওয়া যায় তার প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ, গা্ইড ও পরামর্শ। সেই কাজে নিয়োজিত চাকরি পরীক্ষার রাজ্যের অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অ্যাকাডেমিক অ্যাসেসিয়েশন। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান কর্ণধার ও বিশিষ্ট কেরিয়ার পরামর্শদাতা সামিম সরকার শুরু করেছেন নতুন কলাম।
দিন কয়েক আগে একটি ছেলে আমার সাথে দেখা করতে এল। বয়স হবে চব্বিশ কি পঁচিশ। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমলো চুল, বিবর্ণ মুখ আর হতাশ চাহনি জানান দিচ্ছিল তার পরাজয়ের কথা। ব্যর্থতার গ্লানি বয়সটাকে আরও তিন চার বছর বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘স্যর, তিন - চার বছর ধরে এক নাগাড়ে প্রস্তুতি নিয়ে চলেছি , প্রচুর পরিশ্রম করেছি, কিন্তু সাফল্য আসছে না কিছুতেই, সঙ্গী শুধু ব্যর্থতা আর ব্যার্থতা’- ছেলেটি এক নাগাড়ে বলে চলল। গ্র্যাজুয়েশনের পর সিজিএল এবং ব্যাঙ্কের চাকরিকে টার্গেট করেছিলাম, খেটেওছি প্রচুর কিন্তু ... দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে পিঠটা এলিয়ে দিল। জিজ্ঞাসা করলাম মাধ্যমিকে অংকে তুমি কত পেয়েছিলে ? কিছুটা কুকড়ে গিয়ে উত্তর ছিল- স্যর , সমস্যাটাতো এখানেই। অংক দেখলেই ভয় করে। বললাম 'আর উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে' ? কয়েক মুহূর্ত নিস্পলক থেকে উত্তর দিল 'গ্রামের বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে কি আর ইংরেজিতে স্ট্রং হওয়া যায় ? ভাল গৃহশিক্ষক ছিল না, তাই ইংরেজিতেও বেশ কাঁচা'। এই ছেলেটির মতো অবস্থা হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর। পরীক্ষার প্যাটার্ন এবং চাহিদা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত না হয়ে প্রস্তুতি নিলে ভবিতব্য তো এমনই হবে। ছেলেটি যদি নিজেকে চিনতো - জানতো, নিজের স্ট্রেন্থ - উইকনেস সম্পর্কে সচেতন থাকতো এবং সেই সঙ্গে সিজিল এবং ব্যাঙ্কের চাকরির চাহিদা ও সিলেবাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতো , তবে কখনই ওই দুটি চাকরিকে কেরিয়ার অপশন হিসেবে বেছে নিত না। প্রার্থীকে সবসময় নিজের সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে গেমপ্ল্যান তৈরি করতে হবে। বেশিরভাগ প্রার্থী এই প্ল্যান বা পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে বার বার ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়। অথচ একটু সচেতনভাবে ভেবেচিন্তে কেরিয়ারের দিকে পদক্ষেপ করলে পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয় না। এর জন্য দরকার যোগ্য ব্যক্তিকে দিয়ে কেরিয়ার কাউন্সেলিং করিয়ে নেওয়া। তার জন্য দরকার অবশ্য যোগ্য এবং প্রফেশনাল কাউন্সেলর। এ রাজ্য থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ডিগ্রি কোর্স পাশ করেন, কিন্তু চাকরি পান ক'জন ? ক'জনই বা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন ? বিদেশে একেবারে স্কুল স্তর থেকে কেরিয়ার কাউন্সেলিং চালূ থাকায় সমসা হয় না। তবে সচেতনতা আসায় ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা কেরিয়ার কাউন্সেলিং বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ জীবনধারা কোন খাতে বইবে তা আগেভাগে নিরূপণ করে নেওয়া দরকার। ভেবে দেখতে হবে 'জীবনের জন্য জীবিকা ’, নাকি ‘ জীবিকার জন্য জীবন ’। তরুণ - তরুণীদের এবার নিতে হবে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। সবদিক বিচার-বিবেচনা করে বেছে নিতে হবে নিজের জন্য সঠিক, যথাযথ এবং সর্বোত্তম কেরিয়ারটিকে। দেখতে হবে টার্গেটটি যেন সহজলভ্য এবং শ্রমসাধ্য হয়। নিজের শক্তি সামর্থ্য অক্ষমতা দুর্বলতা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct