আপনজন ডেস্ক: অসমের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি ঘোষণা করেছিলেন, অসমের সব সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অসম সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টা নাগাদ কলকাতার রাসেল স্ট্রিটে অবস্থিত অসম ভবন ঘেরাও অভিযান করে। সেই সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয় সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের পক্ষ থেকে।
এদিন দুপুরে অসম ভবন-এর সামনে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সমর্থকরা এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডাকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভে অসম সরকারের মাদ্রাসা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হন সংগঠনের সদস্যরা। বিক্ষোভ সভা থেকে তিনজনের এক প্রতিনিধি দল অসম ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অসীম কুমার ভট্টাচার্যের হাতে দাবিপত্র তুলে দেন।
ডেপুটেশনে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় অসমে মাদ্রাসা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা মাদ্রাসাগুলি পরিচালনার জন্য অবিলম্বে পূর্বের ন্যায় স্ব-শাসিত বোর্ড পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাধারণ বিদ্যালয়ের ন্যায় মাদ্রাসাগুলির সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা পূর্বের ন্যায় প্রদান করতে হবে।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, মাদ্রাসাকে আবার বিতর্কের মুখে এনে নিয়ে এসেছে বিজেপি শাসিত সরকার। তারা ঘোষণা করেছেন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলোকে বন্ধ করে দেবেন। বিজেপির এ ধরনের সাম্প্রদায়িক খেলা একের পর এক চলছে। তাদের জানা দরকার যে আমাদের দেশের সংবিধানের ৩০ ধারায় যে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রাখার জন্য নিজেদের পছন্দমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার স্বাধীনতা দিয়েছে দেশের সংবিধান।
সংবিধানের ৩০ ধারায় সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা তুলে ধরে কামরুজ্জামান বলেন, ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের পছন্দমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগড়ার ও পরিচালনার অধিকার দিয়েছে সংবিধান। সরকার কোনভাবেই সংখ্যালঘুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারে না বলেও সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। তার পরেও বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে মুসলিম বিদ্বেষকে আরো বিস্তার ঘটানোর জন্য একের পর এক এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার জন্য, বঞ্চিত করার জন্য, অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কামরুজ্জামান।
কামরুজ্জামান হুঁশিয়ারি দেন, আগামীতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বিজেপি বা রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান মোতাবেক দেশের সংখ্যালঘু মানুষের স্বাধীনতা সুরক্ষিত সুনিশ্চিত না করবে আমাদের লড়াই চলবে। এই বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন বিজেপি সরকারের মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক প্রতীকী বিক্ষোভ। সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে তাহলে দেশের ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালীন অসম ভবন ঘেরাও করে রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন কামরুজ্জামান।
এদিন বিক্ষোভ সভা ও ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসেন কাসেমী, কোষাধ্যাক্ষ বাবর হোসেন, অনন্ত আচার্য, খলিল মল্লিক, আলি আকবর, আশরাফ আলী মোল্লা, জিয়াউর রহমান গাইন, নাসির উদ্দিন ঘরামি, মুহাম্মদ আহসানুলন ইসলাম, জসীম উদ্দিন সহ বিভিন্ন নেতৃত্ব।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের উদ্দেশ্যে দেওয়া সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন-এর স্মারকলিপি:
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct