আপনজন ডেস্ক: আবার ফ্রান্সে ফিরে এল ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুন পত্রিকা শার্লি হেবদো পত্রিকায় কার্টুন বের হওয়ার আক্রমণের ঘটনার স্মৃতি। ২০০৫ সালে ফ্রান্সের শার্লি হেবদো পত্রিকা মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল। তার জেরে ওই পত্রিকায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। প্রায় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল শুক্রবার।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের শহরতলির একটি স্কুলে এক ভূগোল ও ইতিহাসের শিক্ষক শার্লি হেবদো পত্রিকায় প্রকাশিত মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ১০-১২ বছর বয়সী ছাত্রদের বোঝাচ্ছিলেন। তা বিক্ষুব্ধ করে তোলে কিছু ব্যক্তির। এর জেরে শুক্রবার বিকাল পাঁচটা নাগাদ রাস্তার ধারে লম্বা ছুরি দিয়ে ওই শিক্ষকের গলা কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যদিও হামলাকারীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।
এ সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বলেছে, কনফ্লান্স-সেইন্ট-হনোরিন শহরে একটি সড়কের ওপর শুক্রবার বিশাল এক ছুরি হাতে এক ব্যক্তি হামলা চালায় ওই শিক্ষকের ওপর। কেটে নেয় তার মাথা। পুলিশের এক সূত্র উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলাকারীকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করতে শুনেছেন। শিক্ষকের মাথা কেটে নিয়ে হামলাকারী দৌড়াতে থাকে। জনসাধারণ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয়। তারা দ্রুত ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। পাশেই ইরাগনির কাছে ওই হামলাকারীর মুখোমুখি হয় পুলিশ। তারা তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু উল্টো সে পুলিশকে হুমকি দিতে থাকে। এ পর্যায়ে পুলিশ তাকে গুলি করে। অল্প পরেই মারা যায় সে। বর্তমানে ওই এলাকা তদন্তের জন্য সিল করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এক কিশোর সহ চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সংবাদ সংস্থা সূত্র জানিয়েছে।
একে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। নিহত ওই শিক্ষক বা হামলাকারী কারোই নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ম্যাক্রন বলেছেন, ওই শিক্ষক মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিক্ষা দিচ্ছিলেন। হামলাকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা বিজয়ী হয়নি। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এ হামলার বিষয়ে তদন্ত করছে সন্ত্রাস বিরোধী প্রসিকিউটররা।
ফরাসি সম্প্রচার মাধ্যম বিএফএমটিভি এই হামলা সম্পর্কে বলেছে, হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। তার জন্ম মস্কোতে। চেচেন বংশোদ্ভূত হতে পারে। অন্যদিকে ফরাসি পত্রিকা লা মন্ডে লিখেছে, হামলার শিকার ব্যক্তি ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক। তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ক্লাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতার শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ওই ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে শার্লি হেবদোর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে এর আগে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। মুসলিম শিক্ষার্থীরা যদি এই শিক্ষাকে আপত্তিকর মনে করে, তাহলে তাদেরকে আগেই ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক।
শার্লি হেবদো হামলার বিচার নিয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে ওই শিক্ষক ক্লাসে এক বা একাধিক ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করেন। এ মাসের শুরুর দিকে এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু মুসলিম অভিভাবক এর বিরুদ্ধে স্কুলে অভিযোগ দিয়েছিলেন।
শুক্রবারের হামলা নিয়ে এরই মধ্যে শার্লি হেবদো টুইট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, অসহিষ্ণুতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। দৃশ্যত আমাদের দেশ থেকে সন্ত্রাস বন্ধে কিছুই করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ফরাসি কার্টুন ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় ওই ম্যাগাজিনটির অফিসে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। তার বিচার চলছে এখনও। এই ম্যাগাজিনটির অফিসের বাইরে তিন সপ্তাহ আগে এক ব্যক্তি হামলা চালিয়ে আহত করেছে দু’জনকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct