আপনজন ডেস্ক: আমাদের দেহের মধ্যে এমন অনেক কোষ আছে যারা প্রতি বছর হাড়ের মধ্যের অস্থিমজ্জা ১০ শতাংশ খেয়ে নেয়। ভাগ্যক্রমে আরেক ধরণের কোষ আছে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে নতুন অস্থিমজ্জা তৈরি করে সেই ঘাটতি পূরণ করে। অস্থিমজ্জা ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে এই অস্থিমজ্জা খেয়ে নেওয়া কোষের সংখ্যা বেশি। এবং খুব দ্রুত তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ছড়িয়ে যায়।
বিগত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই কাজের উপর কোনো ভাবেই সফল হতে পারছিলেন না। এই হাড়ের ক্যানসার এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর থেকে মুক্তির উপায় নেই। এখনও পর্যন্ত এই রোগ চিকিৎসা করে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু নিরাময় করা যায় না। অস্থিমজ্জা ক্যানসারের কারন ও প্রতিরোধ করার কোনো উপায় নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে, এখনও কোনো তেমন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বিজ্ঞানিরা।
অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ বছর কঠোর গবেষণার পর নরওয়ের সেন্টার অফ মলিকুলার ইনফ্লামেশন রিসার্চ-এর গবেষক মিসেস স্যান্ডাল এবং তাঁর টিম এই ধাঁধার বেশ চমকপ্রদ দিক খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এর কারণ খুব অল্প পরিমাণের চিনির উপস্থিতি হাড় ধংসের কারণ। না এই চিনি আমরা যে কেক, বিস্কুট বা খাদ্যের মধ্যে পেয়ে থাকি তা না। এটি যেকোনো অ্যান্টিবডির মধ্যে থাকে। চিনি কিভাবে হাড়ের ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত এটি বুঝতে গেলে আমাদের অস্থিমজ্জা সম্পর্কে বুঝতে হবে।
হাড়ের মধ্যে রয়েছে প্লাজমা কোষ। যখন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে তখন এই প্লাজমা কোষ গুলি তাদের কাজ শুরু করে আক্রমণকারীদের থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। তখন বাইরে থেকে অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করা হয়। যদিও অস্থিমজ্জা ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের দেহে অতিরিক্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। মজাদার বিষয় হল সেগুলিও সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীদের কঠোর গবেষণার মাধ্যমে তারা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, এই অস্থিমজ্জা ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে এবং এই সময় যে অ্যান্টিবডি গুলি তৈরি হয়েছে তাতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে সেখানে খুব অল্প পরিমাণে চিনির উপস্থিতি আছে এবং হাড় খাওয়া কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। যখন তারা বাইরে থেকে সাধারণ চিনির জল প্রয়োগ করলেন এই রোগীদের উপর এই অ্যান্টিবডির মধ্যে খুব অল্প চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করলেন তখন এই হাড় খাওয়া কোষের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবনতা দেখতে পেলেন। অতএব তারা এই পদ্ধতি অনুসরন করার দিকে ঝুঁকলেন। পরবর্তীতে তারা এই ধরনের অস্থিমজ্জা রোগে আক্রান্ত কিছু ইঁদুরের উপর একই পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
আর এর ফলে আশার আলো দেখছে সারা পৃথিবীর সংস্লিষ্ট বিজ্ঞানী মহল। এখন এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে তাদের আরোও গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। স্যান্ডাল বলেন, “চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই চিকিৎসা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করা যাবে আশা করি।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct