আপনজন ডেস্ক: করোনা সংকটকালে সৌদি আরবে কর্মরত এক ব্যক্তির মৃতদেহ নদীয়ায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হল নদীয়ার এক পরিবার। আর সেই কাজকে একশ শতাংশ সহজ করে দিয়েছেন বীরভূম জেলার সাদিকুল ইসলাম নামক এক তরুণ তুর্কী সমাজকর্মী।
নদীয়া জেলার মূরুটিয়া থানার করিমপুর ২ ব্লকের দীঘল কান্দি গ্রামের ছিদ্দিক খান বেশ কয়েকবছর ধরে সৌদি আরবের এক পাথর কোম্পানিতে নিরাপত্তা রক্ষী কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি সৌদি আরবে মারা যান। অভাবের সংসারে চিন্তিত কার্যত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ৪০ বছর বয়সী ছিদ্দিক খানের পরিবার। এলাকার সমাজসেবী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবার কাছে ছুটে যান স্বামীহারা স্ত্রী ও পরিবার। অবশেষে মেলে হতাশা। কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে যখন হাল ছেড়ে দেবেন এহেন অবস্থায় হটাৎ করে ফোন আসে সাদিকুল ইসলাম এর। উনি কোনো এক সংবাদ পত্রে উনাদের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছিলেন। স্থানীয় বিডিও কে ফোন করে বাড়ির সমস্ত তথ্য বের করে বাড়িতে ফোন করেন।
উক্ত পরিবারের সাথে ফোন মারফৎ যোগাযোগ করেন বীরভূমের বাসিন্দা সাদিকুল।
নিঃশ্বাস বন্ধ হতে চলা পরিবারের কাছে অক্সিজেনের মত হটাৎ সাদেকুল ফিরিয়ে দেয় কিছুটা আশ্বাস। মৃত বাবার মুখ দেখবে তার দুই বাচ্চা ও বউ সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জেলা থেকে রাজ্য স্তরের পাশাপশি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আবেদন নিবেদন অনুরোধ করতে থাকেন বারংবার। কিছুটা আশ্বাস মেলায় আরও একধাপ এগিয়ে সাদেকুল সরাসরি ইমেল-ফোন মারফৎ যোগাযোগ করেন সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রকের কাছেও। এখানেও থেমে যাননি তিনি। ছিদ্দিক খান যেই কোম্পানিতে কাজ করতেন সেখানকার প্রথমসারির দায়িত্বরত কর্মকর্তা দের কাছে অনুরোধ করে উক্ত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ সাহায্য করতে দাবি জানান তিনি। সৌদি আরবে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত এর আশ্বাস মেলে যে ভারত সরকারের মাধ্যমে স্থানীয় জেলাশাসক মারফৎ সেই অর্থসাহায্য পাঠাবেন তারা।
এদিকে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সবুজ সংকেত পান যে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে। শেষমেশ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর পান যে চলতি অক্টোবর মাসের ৯ তারিখ ফিরছে মৃতদেহ। উনার সমস্ত জিনিসপত্র পরে কোম্পানি কুরিয়্যার করে ভারতে বাড়ী পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
স্বামী হারা স্ত্রী ও বাপ হারানো সন্তান মাথার ছাতা হারালেও সাদেকুল ইসলামের এই নাছোড় প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।
সাদিকুল ইসলাম জানান "সেদিন খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দেখতে পায় যে উক্ত পরিবারের মূল অভিভাবকের মৃতদেহ আনার চেষ্টা প্রায় বৃথা হতে চলছে, তক্ষুণি আমি চেষ্টা শুরু করি, উক্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে কাজ শুরু করি।" তিনি আরও জানান "সাধারণ মানুষ এবং জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইনাদের মাঝে যে একটা মস্ত বড় শূন্যতা থেকে যাচ্ছে সেটাকে পূরণ করার জন্য আমাদের মত যুবকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে।"
মানুষের কল্যাণে অফুরন্ত কাজ করছেন সাদিকুল ইসলাম। আজকে কবরস্থ হলো সিদ্দিক খানের দেহ সাদিকুল ইসলাম এর উপস্থিতি তে। সৌদির রিয়াধ থেকে দুবাই ও দুবাই থেকে কলকাতা এয়ার পোর্ট, মৃতদেহ বাড়ী ফিরে আসা ও কবরস্থ হওয়া পর্যন্ত সাদিকুল ইসলাম আছেন পরিবারের সঙ্গেই।আরো ছিলেন মুরুটিয়া থানার ওসি ও স্থানীয় নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে লক ডাউন চলাকালীন এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক দের খাবার যোগান কিংবা পঞ্চায়েত থেকে কেন্দ্র অবধি এলাকার সাধারণ মানুষের প্রাপ্য অধিকারের লড়াইয়ে সামনের সারিতে হামেশাই এগিয়ে এসেছে সাদেকুল ইসলাম বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগে ভুটান থেকে একই রকম ভাবে কোচবিহারের এক পরিবারের মৃতদেহ ফিরিয়ে এনেছিলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct