আপনজন ডেস্ক: আমাদের দেশে এখনও উচ্চ বর্ণ ও নিম্ন বর্ণের মধ্যে ভেদাভেদ যায়নি। এক দলিত আইনজীবী ও সমাজকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাহ্মণ বিরোধী পোস্ট করায় তাকে খুন হতে হল। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি মুম্বাইয়ের মালাডে ঘটলেও খুন হওয়ার ব্যক্তির বাড়ি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাতে।
জানা গেছে, জাতিভেদের জেরে খুন হওয়া আইনজীবী ও সমাজকর্মীর নাম দেবজি মাহেশ্বরী। গুজরাতের কচ্ছ জেলার বাসিন্দা দেবজি মাহেশ্বরী অল ইন্ডিয়া ব্যাকওয়ার্ড অ্যান্ড মাইনরিটি কমিউনিটিস এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (বিএএমসিইএফ)এবং ইন্ডিয়ান লিগাল প্রফেশনালস অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণ সমাজকর্মী। এই ঘটনার পরপরই অবশ্য পুলিশ মালাডের এক স্টেশনারি দোকানের কর্মীকে গ্রেফতার করে।
এই দলিত সমাজকর্মী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিএএমসিইএফ-এর প্রেসিডেন্ট ওয়ামান মেশ্রমের বক্তৃতার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ওই ভিডিওতে ওয়ামান বলেন, তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সদস্যরা হিন্দু নন।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা শাখার এক অফিসারের কথা উদ্ধৃত করে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ব্রাহ্মণ বিরোধী ওয়ামান মাহেশ্বরীর লেখা পোস্ট করার পর তার ফেসবুক পাতায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। মুম্বাই পুলিশ বলেছে, ভারত রাভাল নামে এক ব্যক্তি মাহশ্বেরীকে হুমকিও দেয় এই ধরনের পোস্ট ও মন্তব্য করার জন্য।
পুলিশ আরও জানায়, গত একমাস ধরে রাভাল ও মাহেশ্বরীরর মধ্যে বাকযুদ্ধ চলে ব্রাহ্মণ বিষয় নিয়ে। কিন্তু জাতে ব্রাহ্মণ রাবাল একই গ্রামের হওয়ায় মাহেশ্বরী এ নিয়ে আর বেশি বিতর্কে জড়াতে চাননি। কারণ তার অফিসে গিয়ে একবার হুমকিও দিয়ে আসে রাভাল। কিন্তু, মাহেশ্বরী তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, তার যা খুশি তাই করতে পারে। এসব উপেক্ষা করেই তার শেষ পোস্ট ছিল বিএএমসিইএফ-এর প্রেসিডেন্ট ওয়ামান মেশ্রমের বক্তৃতার ভিডিওটাই।
রাপার থানার পুলিশ জানিয়েছে, মাহেশ্বরীর ঘাতক রাভাল তাকে হত্যা করার জন্যই বুধবার রাপার থেকে মুম্বাইয়ের মালাডে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মাহেশ্বরী তার অফিসে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ যান। সে সময় অফিসের মধ্যে একজন লাল জামা পরিহিত ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করতে থাকে। পরে লোকটি অফিসের বাইরে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ রাভালকে এসসি, এসটি আইনের আওতায় হত্যা ও খুনের অবিযোগে রাভালকে গ্রেফতার করেছে। গুজরাত পুলিশের একটি দল শনিবার রাতে মুম্বাই পৌঁছায়। তারপর তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। অন্যদিকে অপরাধ দমন শাখা জানিছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাভাল সহ ৯ জনকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার গুজরাত পুলিশ রাভালকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার পর দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন রাপার এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
শনিবারই বহুজন মুক্তি পার্টির সভাপতি ভি এল মাতাং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এক চিঠি লিখেিএই হত্যা নিয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, খুনে সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করলে মাহেশ্বরীর দেহ নিতে অস্বীকার করে তার পরিবারের লোকজন। এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি জে আর মোথালিয়া বলেছেন, নিহত মাহেশ্বরী দলিত তফশিলি জাতি সম্প্রদায়ের। তার পরিবারের সদস্যদের দাবি যতক্ষণ না অভিযুক্ত নজনকে পুলিশ গ্রেফতার করছে ততক্ষণ তারা তারে শেষকৃত্য সম্পন্ন করবেন না বলে জানিয়েছেন।
রাভাল ছাড়াও মাহেশ্বরী খুনে আরও যাদের নাম এফআইআরে রয়েছে তারা হল জয়সুখ লুহার, খিমিজি লুহার, ধাভাল লুহার, দেভুভা সোধা, বিজয় সিং সোধা, ময়ূর সিং সোধা, প্রবীণ সিং সোধা ও অর্জন সিং সোধা। মাহেশ্বরীর স্ত্রী মীনাক্ষী বেন মাহেশ্বরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct