আপনজন ডেস্ক: গোরক্ষকদের তাণ্ডবের শিকার হল এবার খ্রিস্টানরাও। খ্রিস্টানরা শূকরের মাংস খেলেও খাদ্যাভ্যাসে মুসলিমদের মতো প্রায় একই। তাই ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী খ্রিস্টানরা গো হত্যা করেছে এই অভিযোগ তুলে সাতজন খ্রিস্টান বাসিন্দাকে ব্যাপক মারধর করল গোরক্ষক বাহিনী। সেই সঙ্গে তাদের মাথা ন্যাড়া করে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হল।
এই বিদ্বেষমূলক ঘটনাটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডের সিমডেঙ্গা জেলায় ঘটলেও সংবাদের আলোয় আসে স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টাল ঘটনাটি প্রকাশ করায়। তারপর ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ আজ শনিবার প্রথম পাতায় ফলাও করে ছেপেছে সেই খবর।
পুলিশ অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এ ব্যাপারে সিমডেঙ্গা থানার পুলিশ অফিসার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতিগত কারণে আদিবাসী খ্রিস্টানরা নিগৃহীত হওয়ায় এসসি-এটি আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
টেলিগ্রাফ সূত্রে জানা গেছে, ২৬ বছরের এক আদিবাসী খ্রিস্টান দীপক কুল্লু জানান, প্রায় জনা পঁচিশ লাঠি, রড, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২৫ জনের মানুষের দল পাশের গ্রাম থেকে তার গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারপর তিনি দেখেন তারা রাজ সিং কুল্লু নামে এক বাসিন্দাকে মারধর করছে। আর তার স্ত্রী জ্যাকেলাইন কুল্লুকে জাত তুলে গালাগালি করছে। যখন তাদেরকে এই মারধরের কারণ জিজ্ঞেস করা হয়, তারাও আমাকে জাত তুলে গালাগালি করে ও গো হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে।
দীপক কাল্লু আরও জানান, রাজ বারেবারে বলতে থাকেন যে গো হত্যা করেননি। কিন্তু দলবল এক বয়স্ক লোকের ভুয়ো ভিডিয়ো দেখিয়ে বলে গোহত্যা হয়েছে।
সেই গোরক্ষক বাহিনী দীপককে ও আরও ছজন খ্রিস্টান অদিবাসীকে প্রায় আধ কিলোমিটার পথ টানতে টানতে প্রায় পার্শ্ববর্তী মাহাতো টোলা গ্রামে নিয়ে যায়। তারপর ফের মারধর শুরু হয় ও জোর করে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করে।
এরপর জনতা তাদেরকে একটা গাছে বেঁধে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। যদিও তারা বারবার বলে যে, কোনও গোহত্যা করেনি। দীপক জানান, ওই লোকরাই সিমডেঙ্গা থানার পুলিশকে ডেকে এনে তাদেরকে গো হত্যাকারী বলে অভিযোগ জানায়। পুলিশ মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসে তাদেরকে নিয়ে থানায় যায়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, এসসি, এসটি আইনে ও অন্যান্য আইপিসিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। মহকুমা পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত দল গঠন করে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ নিগৃহীতকে চিহ্নিত করেছে। তারা হলেন, রাজ, দীপক, ইমানুয়েল টেটে, সুগড় ডাং, সুনীল বারলা, সোশন ডাং এবং সেম কিডো। আর নজন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হল, নয়ন কেশরী, সনু সিং, সনু নায়েক, তুলসী সাহু, শ্রীকান্ত প্রসাদ, দীপক প্রসাদ, অমন কেশরী, রাজেন্দ্র প্রসাদ ও নকুল পাতার। এদের মধ্যে সনু সিং, সনু নায়েক, নয়ন ও রাজেন্দ্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
উল্লেখ্য, ঝাড়েখণ্ডে ২০০৫ সালে বিজেপি শাসনামলে গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct