আপনজন ডেস্ক: লকডাউনের জেরে চা উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিকদের এখন বেহাল অবস্থা। একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমনিতেই মাথায় হাত ছিল, তার উপর এখন লকডাউন। শ্রমিকের কাজ করে পেটে দুটো অন্ন জোটাতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। আর তার জেরে চা বাগান শ্রমিক পরিবারের শিশু সন্তানদের মর্মান্তিকভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এই মর্মান্তিক দৃশ্য আকছার দেখা যাবে বন্ধ চা বাগান এলাকায়। বিশেষ করে ডানকান টি কোম্পানি পরিচালিত বীরপাড়া চা বাগান এলাকায়। সেখানে শিশুরা যে থালায় ভাত খায় সেই থালায় নদী থেকে পাথর কিংবা বালি তুলে আসছে। এসনই একটি পরিবার হল মংরি ওরাওঁয়ের পরিবার। মংরি ওরাওঁয়ের কাজ নেই। বীরপাড়া চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন।
তাই বাধ্য হয়ে মংরি এখন গ্যারগান্ডা নদী থেকে বালি-পাথর তুলে সংসার চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বামী আগেই মারা গেছেন। তাই পঞ্চ শ্রেনিতে পড়া মেয়ে সুনীতা ওরাওঁকে নিয়েই তার চিন্তা। সেও কিন্তু তার মায়ের সঙ্গে নদী থেকে বালি-বজরি তুলতে যায়। স্কুল বন্ধ থাকায় ঝড় জলের মধ্যেও এবাবেই নদীর পাথর কুড়িয়ে তার দিন কাটে। আর সেই পাথরের টুকরো থালা থেকে সরিয়ে সেই থালাতেই ভাত খায়।
তাদের এমন হাভাতে অবস্থা হত না যদি ডানকান টি কোম্পানি পরিচালিত বীরপাড়া চা বাগানটি বারবার খুলেও ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ফের বন্ধ না হয়ে যেত। তবে, বন্ধ এই চা বাগানের শ্রমিক ও কর্মীরা কমিটি গড়ে কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি সংসার চালান। এক কেজি কাঁচা পাতা তুললে মেলে মাত্র ১০ টাকা। তাই মংরির মতো শান্তামুনি ওরাওঁ অশোক কুজুরদেরও নদী থেকে বালি পাথর তুলে সংসার চালাতে হয়। আর তাতে মেলে সামান্য পয়সা। জানান, এক পৌয়া বালি-বজরি, পাথর জমা করলে ১৫০ টাকা পাওয়া যায়। আর ১০ পৌয়ায় এক ট্রাক ভর্তি হয়। তখন একটু স্বস্তি আসে।
এভাবেই কি দিন চলবে সে ব্যাপারে চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের সহ সভাপতি মান্নালাল জৈন বলেন, বীরপাড়া চা বাগানের শ্রমিক-কর্মচারীদের তরফে চা বাগানের শ্রমিক সংগঠনগুলি বাগান যাতে খোলে তার জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের উপরেই তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct