আপনজন ডেস্ক: জঙ্গি সন্দেহে মুর্শিদাবাদ ও কেরল থেকে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। সেই গ্রেফতারের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে উপযুক্ত বিচারের দাবি জানালেন রাজ্যের বেশ কিছু গণসংগঠন ও বিশিষ্ট জনরা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহাকুমার অন্তর্গত জলঙ্গি, ডোমকল, রানীনগর থানার বিভিন্ন স্থান থেকে ৬ জন যুবককে এবং ডোমকল মহকুমার অন্তর্গত ৩ জন যুবককে কেরালা থেকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র বিশেষ দল। ওই ৯ জন যুবক বিভিন্ন ভাবে জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার হয়ে কাজ করছিল বলে অভিযোগ আসায় তার ভিত্তিতে এনআইএ গ্রেফতার করে। কিন্তু তার পরিবারের লোকজনও ও স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ তাদেরকে মিথ্যা দোষারোপ করে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপপ্রয়াস চলার অভিযোগে সেই মনোভাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্যের বিশিষ্টজনরা ও কিছু গণসংগঠন। শুধু তাই নয়, যে অভিযোগে ওই সব যুবকদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা সত্যি কিনা যাচাই করতে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন তারা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, সঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মখোপাধ্যায়, তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার, পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী প্রমুখ। এই অবস্থায় বিভিন্ন গণ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে যৌথ বিবৃতি পেশ করেছেন তার সারমর্ম হল:
১) এনআইএর বিশেষ দল রাতের অন্ধকারে কয়েকজন যুবকের বাড়ি তল্লাশি করে গ্রেফতার করলেও কোন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে তা তাদের পরিবারকে জানানো হয়নি বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। যা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
২) গ্রেফতারির পরে একাধিক সংবাদমাধ্যমে এনআইএ-র সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন রিপোর্টে এদের 'আল কায়দা' জঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই এভাবে জঙ্গি তকমা দেওয়া এটি সংবিধান ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এই প্রচার জনমানসে ও বিচার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩) সাধারণ একটি সেপ্টিক ট্যাঙ্ককে গোপন সুড়ঙ্গ বলে প্রচার করায় তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে।
৪) একজন সাংবিধানিক প্রধান হওয়ার পরেও রাজ্যপাল এই বিষয়ে আপত্তিজনক বক্তব্য প্রদান করেছেন যা নিন্দাজনক। সাংবিধানিক প্রধানের এই ধরনের মন্তব্য রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য চরম ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে রাজ্যের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যও যথেষ্ট আপত্তিজনক।
৫) ধৃত যুবকদের বিষয়ে আমরা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু কোনো নিরপরাধ যুবককে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তার ন্যায় পাওয়ার অধিকারকে যেন হরণ করা না হয়। ইতিপূর্বে বহু নিরপরাধ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার পরে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তাঁরাও একই রকমভাবে তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন অথচ তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরে তাদের বিষয়টি কোনো বিশেষ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেনি।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য আবেদন জানান বিশিষ্টজনরা।
এই সব আবেদনকারীদের অন্যতম হলেন.
১. প্রতুল মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত সংগীত শিল্পী।
২. সুজাত ভদ্র, প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী।
৩. প্রসূন ভৌমিক, কবি ও সাহিত্যিক।
৪. মাওলানা আব্দুর রফিক, আমীরে হালকা - জামাআতে ইসলামি হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ।
৫. ত্বহা সিদ্দিকী, ফুরফুরা দরবার শরীফ ও সদস্য - অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ড।
৬.ক্বারী মাওলানা শামসুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক - জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ।
৭.অধ্যাপক অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, প্রাক্তন চেয়ারপার্সন - চাইল্ড রাইটস্ কমিশন।
৮.অধ্যাপক দীপঙ্কর দে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
৯.সৌমিত্র দস্তিদার, বিশিষ্ট ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার।
১০. শরদিন্দু উদ্দীপন, জয়ভীম নেটওয়ার্ক।
১১. মুফতি আব্দুল মাতিন, সাধারণ সম্পাদক - সুন্নাত-অল-জামাআত।
১২. মাওলানা মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক - সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন।
১৩. মাওলানা মারুফ সালাফী, জমিয়তে আহলে হাদীস হিন্দ।
১৪. মাওলানা আলমগীর সর্দার, সাধারণ সম্পাদক - জমিয়তে আহলে হাদীস, পশ্চিমবঙ্গ।
১৫. পার্থ সেনগুপ্ত, সভাপতি - সদ্ভাবনা মঞ্চ ও সম্পাদক - বিশ্বকোষ পরিষদ।
১৬. নিয়ামত হোসেন হাবিবি, মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ, কলকাতা।
১৭. মাওলানা শারাফাত আবরার, মজলিশে আহরার-এ-ইসলাম।
১৮. ছোটন দাস, সাধারণ সম্পাদক - বন্দী মুক্তি কমিটি।
১৯. মাওলানা তামিম সিদ্দিকী, সিতাপুর দরবার শরীফ।
২০. আব্দুল আজিজ, সম্পাদক - ফোরাম ফর ডেমোক্র্যাসী এন্ড কমিউনাল অ্যামিটি (FDCA), পশ্চিমবঙ্গ।
২১. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক - আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, কলকাতা।
২২. আবদুস সামাদ, আহ্বায়ক - এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস্ (APCR), পশ্চিমবঙ্গ।
২৩. মুফতি মাওলানা তাহেরুল হক, দারুল কাযা, পশ্চিমবঙ্গ।
২৪. ওসমান গনি, রাজ্য সভাপতি - এস.আই.ও, পশ্চিমবঙ্গ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct