আপনজন ডেস্ক: যায়নবাদী সরকারের আগ্রাসন নিয়ে নয়া তথ্য সামনে আনল খোদ ইসরাইলি অধিকার গোষ্ঠী সংস্থা ম্যাকসোম ওয়ার্চ। এই অধিকার গোষ্ঠীর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয়স্থানগুলিতে আগ্রাসন চালাতে তিনটি কৌশল নিতে চলেছে।
তাদের এই বিস্তারিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা ইসরাইলে বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থাৎ পবিত্র আল আকসা ছাড়া আরও কিছু ইসলামিক ধর্মীয়স্থান রয়েছে। সেই স্থানগুলি নবীদের ও আলেমদের নামাঙ্কিত। সেইগুলিকেই তিনটি স্ট্র্যাটেজি দিয়ে দখল করে নিতে চলেছে নেতানিয়াহু সরকার।
এই ইসরাইলি স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী জানিয়েছে, ধর্মীয় ছুটির দিনে প্রার্থনা করার জন্য বা অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই পবিত্রস্থান পরিদর্শন করতেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। কখনও কখনও, তারা পারিবারিক সমাবেশের আয়োজন করে এই জায়গাগুলি পরিদর্শন করতেন। কিন্তু ম্যাকসোম ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় স্থানগুলি ব্যবহারে দ্বিচারিতা শুরু হয়। তারা বলপূর্বক ফিলিস্তিনিদের ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সমস্ত পবিত্র স্থানগুলিতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গেলে ইসরাইলি প্রশাসনে অনুমতির প্রয়োজন পরে। হিব্রু বাইবেল ‘তোরাতে’ বর্ণিত নবীদের নামে চিহ্নিত ধর্মীয়স্থানগুলির ওপর বেশি করে নজর দিতে শুরু করে ইসরাইল। সেই ধর্মীয়স্থানগুলিকে তাদের আগ্রাসনের নিশানা বানায়। প্রতিটি ফিলিস্তিনি ধর্মীয়স্থানগুলির ইতিহাস বিকৃত করে সেগুলিকে বিশ্ব দরবারে ইহুদিদের ধর্মীস্থান হিসাবে পরিচিত করা জন্য চেষ্টা চালায়। আল কুদস-কেএই ভাবেই বিকৃত করার চেষ্টা করেছে তারা।
পাশাপাশি সেই পবিত্রস্থানগুলিকে ইসরাইলি সেনা অঞ্চলের অংশ হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই অঞ্চলগুলি সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য জনবসতি বা অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত কৌশল হল, এই ধর্মীয়স্থানগুলির অঞ্চলগুলিকে প্রকৃতি সংরক্ষণের নাম দিয়ে সেখানে আরও বেশি করে সেনা তত্ত্বাবধান বাড়িয়েছে।
দৃশ্যতভাবে ম্যাকসম ওয়াচ দাবি করে যে, নিয়মিত পরিদর্শনকারীদের অভাব, ইসলামিক ও ফিলিস্তিনের পবিত্র স্থানগুলি তাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলছে। ফলে এখনগুলিই ইহুদিদের ধর্মীয়স্থান হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করছে।
তৃতীয় স্ট্র্যাটেজি হল, হিব্রু বাইবেল তোরায় লেখা নেই এমন সমস্ত নবীদের নামাঙ্কিত ঐতিহাসিক ধর্মীয়স্থানগুলিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। তাতে সংরক্ষণের অভাবে নিজে থেকেই ওই স্থানগুলি ধ্বংস হয়েছে যাচ্ছে এবং সেই সময় শুধু ইহুদিদের ধর্মীয়স্থানগুলিকে সংক্ষরণের জন্য তহবিলের টাকা খরচ করা হচ্ছে। ফলে বিশ্ব ইতিহাসের পাতা থেকে নাম মুছে যাচ্ছে ফিলিস্তিনদের ইতিহাস।
ম্যাকসম ওয়াচ নিশ্চিত করেছে, যে ইস্রায়েলি কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অজুহাতে ইহুদিদের জন্য এই জায়গাগুলিতে নিয়মিত সফরের ব্যবস্থা করে। পশ্চিম তীরের শহর নাবলাসে জোসেফ এবং রাহেলের সমাধিগুলির উদাহরণ দিয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের পবিত্র স্থানগুলিকে ‘এরিয়া সি’ এর নাম দিয়ে সেগুলিকে সংরক্ষণ করা অজুহাতে বন্ধ করে রেখে দিয়েছে এবং সেগুলি একেবারে ধসে পড়ার আগে পর্যন্ত কোন সংরক্ষণে উদ্যোগ নিচ্ছে না। পরে সেগুলিকে সংরক্ষণ করে ইহুদিদের ধর্মীয় স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা চেষ্টা করছে।
সালমান আল-ফারিসি পর্বতের শীর্ষে অবস্থিত সালমান আল-ফারিসি সমাধিটিকে এইভাবেই আগ্রাসনের নিশানা বানিয়েছে ইসরাইল। জায়গাটি ইসরাইলের ইয়েজির সেটেলেমেন্টের আওতাধীন করে প্রাকৃতিক রিজার্ভে পরিণত করা হয়েছে।
ম্যাকসম ওয়াচ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, যায়নবাদীদের অভিযোগ ছিল ওই অঞ্চলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা সেখানকার গাছপালা নষ্ট করে প্রকৃতিক সম্পদহানী করছে। এই অজুহাতে সালমান আল-ফারিসি মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দেয় যায়নবাদী সরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct