আপনজন ডেস্ক: এতদিন রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অত্যাচার নিয়ে মুখ খোলেনি মায়ানমারের জান্তা সরকার। সমস্তটাকেই সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযান হিসাবে চালানোর চেষ্টা করে এসছে। এবার এই প্রথম নিজেদের পাশবিক নির্যাতনের কথা অন রেকর্ড স্বীকার করলেন মায়ানমারের দুই সেনা সদস্য। তারা ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা খুল্লামখুল্লা বর্ণনা দিলেন। তারা জানালেন মায়ানমার সেনা সদস্যরাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা করেছে , একই সঙ্গে নারী ও কিশোরীদের গণধর্ষণ করে ছিল। এতদিন অধিকার কর্মীদের কাছে তাদের ওপর মায়ানমান সেনাদের চালানো পৈশাচিক অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে গিয়েছেন আক্রান্ত রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরগুলি থেকে বারবার তাদের নরক যন্ত্রনার কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু তা কোনও দিনই প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি মায়ানমার সরকার।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস-এর একটি গবেষণা রিপোর্ট এটির সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, যে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অধিকার কর্মীদের দলটি জানিয়েছে, যে দুই সেনা গত মাসে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল এবং বলা হয় যে তারা হেগের আইসিসির হেফাজতে রয়েছে।
ওই দুই সেনার নাম মায়ো উইন টুন এবং জা নাইং টুন। সেখানে তারা মায়ানমার সেনাবাহিনীর ১৯ জন প্রত্যক্ষ অপরাধী এবং তাদের তালিকা সহ তাদের জন সিনিয়র কমান্ডার নাম জানিয়েছে। তারা দাবি করেছেন, যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অপরাধের আদেশ দেওয়া হয়ে ছিল এবং সেই অপরাধে মায়ানমার সেনাযুক্ত।
মায়ানমার সেনার অত্যাচারের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে একটি অভিযানের কথা মায়ো উইন টুন নামে ওই সেনা সদস্য জানায়, রাখাইনে ১৫ তম মিলিটারি অপারেশনস মুসলিম গ্রামগুলিতে অভিযান চালানোর সময় নির্বিচারে গুলি চালানো আদেশ দেওয়া হয়ে ছিল। সেই অভিযানে আট মহিলা, সাত শিশু এবং ১৫ পুরুষ এবং এক বৃদ্ধ নিহত হয়। তাদের পড়ে দাফন করে দেওয়া হয়।
মায়ো উইন টুন বলেন,"আমরা মুসলিম মহিলাদের গুলি করার আগে তাদেরও ধর্ষণ করেছি, সেখানে কর্পোরাল, সার্জেন্ট এবং অফিসাররা ছিলেন যারা মুসলিম মহিলাদের ধর্ষণ করেছিলেন। আমিও একবার ধর্ষণ করেছি। ”
মায়ানমার সরকার ধারাবাহিকভাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এই বছরের শুরুর দিকে দাবি করা হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক আদালত রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন রোধ করার জন্য মায়ানমারকে আদেশ দেওয়ার পরে অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছে মায়ানমার।
রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে যে, গত বছর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) আক্রমণের পরে সামরিক বাহিনীর ২০১৩ সালের ক্র্যাকডাউন থেকে কমপক্ষে ১০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৭লক্ষ্যেরও বেশি তারা রাখাইন রাজ্যে পালিয়েছে। কথিত আছে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা মহিলা ও মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, এবং ২০১৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা গ্রাম মাটিতে নষ্ট হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct