আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে হরিয়ানায় নাপিতের কাছে যাচ্ছিলেন ২৮ বছরের এক তরুণ ইখলাক সালিমানি। হরিয়ানার পানিপথে যাওয়ার মুখে তৃষ্ণার্ত হয়ে একজনের বাড়িতে জল চাইতে দিয়ে তিনি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের শিকার হলেন। মুসলিম পরিচয় জানতে পেয়ে মারধরের পর হাতের টাট্টুতে মুসলিম চিহ্ন ‘৭৮৬’ আঁকা থাকায় সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিরা তার হাত কাঠ চেরাই মেশিনের করাত দিয়ে নির্মমভাবে কেটে দিয়েছে। সেই হাত কাটা অবস্থায় আখলাক জীবন সংগ্রামে লড়ছেন সাহারানপুরের একটি হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৩ আগস্ট। এতদিন পর সেই ঘটনা প্রকাশ্য এসেছে। ইখলাকের দাদা ইকরাম (৩৮) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পেশায় নাপিত আখলাক লকডাউনে উত্তরপ্রদেশের নানাউতা গ্রামে বাড়িতেই বসেছিলেন। কিন্তু লকডাউন বিধি শিথিল হতে হরিয়ানার পানিপথের উদ্দেশ্যে সেলুনের কাজের জন্য বের হন। দিল্লি পর হয়ে পানিপথে যাওয়া পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় কিষাণপুরা এলাকার একটি পার্কে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেসময় কয়েকজন ব্যক্তি এসে তার নাম জানতে চায়। মুসলিম না জানার পর তাকে মারধর করতে থাকলে কোনওক্রমে পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ায় কাছাকাছি একটি বাড়িতে গিয়ে দরজায় টোকা মেরে জল চান আখলাক। সেসময় ওই মারধর করা ব্যক্তিদের চোখে পড়েন আখলাক। এরপর তারা টেনে হিঁচড়ে ইখলাককে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায়। তিন ব্যক্তির সঙ্গে দুই মহিলা লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন।
এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। এরপর তারা দেখে মুসলিম চিহ্ন ‘৭৮৬’ টাট্টু আঁকা তার হাতে। তখন সেই লোকগুলো আর দেরি না করে কাঠ চেরাই মেশিনের করাত এনে ৭৮৬ লেখা সহ হাতটা কেটে দিয়েছে। সেই হাত কাটা অবস্থায় ইখলাক জীবন সংগ্রামে লড়ছেন সাহারানপুরের একটি হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে। এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। ফের উসকে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের দাদরি গ্রামে গো মাংস রাখা সন্দেহে মুহাম্মদ আখলাককে পিটিয়ে মারার ঘটনা।
ইখলাক সালমানির দাদা ইকরাম আরও জানিয়েছেন, মুসলিমদের কাছে ‘শুভ’ হিসেবে ইখলাক ১৫ বছর বয়সে তার হাতে ৭৮৬ নম্বর টাট্টুতে আঁকেন। কিন্তু তার জন্য এমন পরিণতি হবে কে জাননে। ইকরাম জানান, রেললাইনের কাছে পড়ে থাকা অচেতন ইখলাকের জ্ঞান ফেরে ভোর পাঁচটা নাগাদ। তখন পাশ থেকে যাওয়া লোকদের কারও ফোন মারফত বাড়িতে খবর দেন। তখন পানিপথ থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে সকাল সাতটা নাগাদ। ঘণ্টাখানেক পর তাকে রোহতকে বি বিডি শর্মা ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েয়েন্সসে ভর্তি করা হয়।
ইকরাম পানিপথে গিয়ে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পারেন, ইখলাককে মেরে লেললাইনের ধারে ফেলে রাখা হয়েছিল যাতে বোঝানো যায় সে রেল দুর্ঘটনার শিকার। ইখলাক বরাত জোরে বেঁচে যাওয়ায় সব কথা খুলে জানান। তিন দিন আগে রোহতকের হাসপাতালে থাকার পর ইখলাককে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সাহারানপুরে আনার পর তার শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ থাকায় ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এখন চিকিৎসাধীন ইখলাক।
তবে, ইখলাকের দাদা ইকরামের অভিযোগ, পানিপথের পুলিশ এই ঘটনাকে রেল দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাইছে। ইকরাম যখন রোহতকের হাসপাতালে পৌঁছান তখন সেখানে ছিলেন জিআরপি থানার এসআই। তিনিও এই ঘটনাকে রেল দুর্ঘটনার কথা বলতে চান। রেল পুলিশ যদিও এফআইআর দায়ের করে ঘটনার দু সপ্তাহ পর। তাতে হত্যার অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কথা লেখা ছিল না। ইকরাম আখলাকের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনে সংবাদ মাধ্যমে বলার পর বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে শুরু করে। বিভিন্ন মহল থেকে এই ধরনের নির্মম ঘটনার নিন্দা করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct