নাজমুস সাহাদাত, কালিয়াচক, আপনজন: ফের নিখোঁজ মালদহের কালিয়াচকের পরিযায়ী শ্রমিক। মালদহ জেলার কালিয়াচক থানা এলাকার সিলামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর চাকনগর গ্রামের ওই যুবক আসিকুল রহমান (২১)। পেশায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবার সূত্রে জানা যায়, কাজ শেষ করে মুম্বাই থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় কালিয়াচকের পরিযায়ী শ্রমিক আসিকুল রহমান। গতকাল সন্ধায় তার সাথে মোবাইল ফোনে শেষবারের মত কথা হয় আসিকুলের বাবার। তখনও আসিকুল ট্রেনেই ভ্রমণ করছিল। কিন্তু হটাৎই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার মোবাইল ফোনও সুইচ অফ। আরও জানা যায়, আসিকুলের সাথে একই গ্রামের দুই যুবকও বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের চোঁখের পলকেই নিখোঁজ বছর একুশের যুবক আসিকুল। তারাও তাকে ট্রেনের মধ্যে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও এখনও সন্ধান পাওয়া যাইনি ওই শ্রমিকের। অবশেষে তারা আসিকুলের বাড়িতে বিষয়টি জানানো মাত্রই হতাশায় পরিবার। এদিকে নিখোঁজ পরিযায়ী শ্রমিক আসিকুলের পরিবারের তরফ থেকে কালিয়াচক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আসিকুলের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। তবে হটাৎ করে ট্রেন থেকে নিখোঁজ কিভাবে? কোথায় যেতে পারে? তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। শ্রমিকের বাবা তালেব আলি বলেন, দু’মুঠো পেটের খাবারের উদ্দেশ্যে ছেলেকে ভিনরাজ্যে কাজে পাঠিয়ে হতাশা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। সারাদিন খবরে অহরহ দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক থেকে ফেরিওয়ালাদের ধরে ধরে থানায় আটক করছে অথবা মারধর করছে, লুটপাট করছে তার ভয়ে এমনিতেই ছেলেকে নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। আর সেটা বাস্তবে সত্যিকারেই আজকে আমার ছেলে নিখোঁজ। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক গরিব, খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিক। আমার ছেলে কিছুটা মানসিকভাবে দুর্বল হলেও পেটের তাগিদে মুম্বাইতে কাজ করতে গিয়েছিল। আর বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ছেলে এখন আমি কি করব, কোথায় যাব?
প্রসঙ্গত, বেশকিছুদিন ধরেই বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর একপ্রকার অত্যাচার চলছে। আর এই নিয়ে আতঙ্কে শ্রমিকরা সহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও গত মাসেই ভিনরাজ্যে কাজের সূত্রে গুজরাট যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে কালিয়াচকের সুজাপুর গয়েশবাড়ি কালাপাহাড় এলাকার নাসিউল হক (৩০) হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবার সূত্রে, এখনও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাইনি বলে জানা যায়।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুখ জানান, জীবন জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য গুলো কে। বাংলা ভাষায় কথা বলা ও বাঙালী বিদ্বেষ থেকে শ্রমিকরা হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দ্বারা। এর সাথে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর প্রশাসনের একাংশ জড়িত আছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয় না পুলিশ প্রশাসন। নিজের দেশে বাঙালী পরিযায়ী শ্রমিকরা আতংকে ভুগছে। নিজের দেশ মাতৃভূমি ভয়ের ভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের উচিৎ কড়া পদক্ষেপ গ্রহন করা। আরও লক্ষ্য করছি নিরুদ্দেশের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। নিরুদ্দেশের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কুচক্র কাজ করে। এটা একটি সংগঠিত অপরাধ। সেক্ষেত্রে পুলিশকে সর্তক ও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে আবার পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষকে তার আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct