সজল মজুমদার: “বই” আমাদের বিশ্বস্ত এবং পরম বন্ধু। সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রিয় জ্ঞানপিপাসু সৃজনশীল মানুষের কাছে যে কোন ধরনের বই এক অমূল্য সম্পদ। বই যেমন মানুষের জ্ঞানের জগত বাড়ায়, তেমনি অনেক অজানা তথ্য ও তত্ত্বের সুলুকসন্ধান দেয়। সুস্থ চিন্তার জগৎ গড়তে বইয়ের বিকল্প নেই। প্রবাদ আছে, “ একটি বই পড়া মানে হলো , একটি সবুজ বাগানকে পকেটে নিয়ে ঘোরা” । বইয়ের পাতা উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে কখন যে বেলা গড়িয়ে যায় বোঝায় যায় না। কারো কাছে বই পড়া একটা নেশা। কারো কাছে “বই” মানে নিভৃত শান্তির অবসর যাপন। নতুন বইয়ের সুবাস, পুরনো বইয়ের গন্ধের মাদকতা আট থেকে আশি বছরের সকলকে সমান আকর্ষিত করে। প্রসঙ্গত, বই পড়া, বই প্রকাশ করা, এবং কপিরাইট সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে UNESCO এর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ২৩ শে এপ্রিল বিশ্ব বই বা পুস্তক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্ব বই দিবস উদযাপন আজকের সোশ্যাল মিডিয়া, হাই স্পিড নেট দুনিয়ায় অতি প্রাসঙ্গিক নাকি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, এটা একটা বড় প্রশ্ন? এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বই পড়বার প্রতি আগ্রহ, উৎসাহ ইত্যাদি কতটা রয়েছে!!! গ্রামীন গ্রন্থাগার এবং জেলা গ্রন্থাগার গুলিতে এখন বই পড়বার পাঠক কেমন! শহরতলীর বইয়ের দোকানগুলিতে পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত অন্য ধরনের বইয়ের চাহিদা কেমন! বই বাজার কি অবস্থায় রয়েছে! বই দিবসে এই বিষয়গুলোর চিন্তা ভাবনা থেকেই কথা হচ্ছিলো উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের দুই প্রথিতযশা অধ্যাপকের সাথে। বিশিষ্ট বন্যপ্রাণবিদ,লেখক এবং বর্তমানে কালিম্পং কলেজের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ড: রাজা রাউত জানালেন, “ বই পড়ার বিকল্প হয় না ঠিকই। তবে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি যেভাবে উন্নত হয়েছে তারই সুবাদে অনলাইনে কিন্ডেল বুক,মোবাইল,পি ডি এফ ইত্যাদির মাধ্যমে বই অনেকেই পড়ছে। তবে একটা বিষয়, এখানে তথ্য যে সব সময় সঠিক থাকে তাও নয়, অনেক বিকৃত তথ্যও থাকে। কিন্তু সেটাকে সিলেক্টিভ আকারে নিতে হবে, যেটা এখনকার ছেলে মেয়েরা নিতে পারছে না। উৎস যাচাই করতে পারছে না। বইয়ে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিষয় বা তথ্য একেবারে নির্ভুল আকারেই পাওয়া যায়। আমি মনে করি, এখনকার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বইটাকে একেবারে ব্রাত্য করে অনলাইনেই সব পড়ে না নিয়ে বরং বইপড়া এবং অনলাইনে বই পড়ার মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখতে পারে। লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশোনা চর্চা করা এখন বিশেষ প্রয়োজন। এতে মনসংযোগ, ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা, এবং শৃঙ্খলা বোধ বাড়ে। তাই অনলাইনে পড়ার পাশাপাশি ‘বই পড়া ‘ ও লাইব্রেরীতে গিয়ে অধ্যয়ন দুটোই একসাথে করলে ভালো হয়।” অন্যদিকে বই দিবসে বই নিয়েই আলোচনা চলছিল সুদূর দক্ষিণ ২৪পরগনার রায়দিঘি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক সনত কুমার পুরকাইতের সাথে। তিনি বললেন, “ সত্যি, বই পড়ার কোনো বিকল্প হয় না।কিন্তু বর্তমান সময়ে কম্পিউটার, কিনডেল, মোবাইলের দাপাদাপিতে অনেকেই পি ডি এফ্ বা ই - বুক বেছে নিয়েছেন। তবে মোবাইলের অন্যান্য এপ্লিকেশন হাতের কাছে থাকলেই সেটা পি ডি এফ পাঠের জন্য থাকেনা, জমা হয় ফোল্ডারে। অনেকেই পাঠকের তুলনায় সংগ্রাহক হয়ে উঠছেন বেশি করে। এরা আবার নিজের পছন্দের থিমের উপর পি ডি এফ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এর অর্থ এই নয় যে, এরা ভালো পাঠক। এমনও শোনা গেছে এসব মানুষ গত এক দশকেও অনেক বইয়ের পাতাই উল্টে দেখেননি। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও জ্ঞানের সম্মিলন, জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে বই পড়া অপরিহার্য।” পরিশেষে বলা যায়, গুণমুগ্ধ পাঠক ছাড়া যেমন একটা বই মূল্যহীন, ঠিক তেমনই বই - ই পারে সকল সুস্থ মনের মানুষের প্রকৃত বিকাশ ঘটাতে। বই এবং পাঠক একে অপরের পরিপূরক। পাঠকের গ্রহণযোগ্যতার ওপর বইয়ের বিনি কিনি নির্ভর করে।তাই বিশ্ব বই দিবসে মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার উন্মেষ ঘটাতে বেশি করে “ বইপড়া” হোক সকলের অঙ্গীকার।।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct