সারিউল ইসলাম, ধুলিয়ান, আপনজন: একপাক্ষিক পরিদর্শন শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে? এমনই প্রশ্ন তুলল সুতিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়া ইজাজ আহমেদের পরিবার। উল্লেখ্য, শনিবার মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। পাশাপাশি এদিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশন এলাকাগুলি পরিদর্শন করে। বাবা হরগোবিন্দ ও তার ছেলে চন্দন দাস খুন হওয়া জাফরাবাদে এদিন যান তারা। জাফরাবাদ থেকে বেরিয়ে বেতবোনা হয়ে ধুলিয়ান থেকে বহরমপুর যাওয়ার জন্য রাজ্যপালের কনভয় বেরিয়ে যায়। কিন্তু বেতবোনা এলাকায় রাজ্যপালের গাড়ি না দাঁড়ানোই কনভয়ের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখায় এলাকার বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, এই বেতবোনা থেকে বহু পরিবার নদী পেরিয়ে মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলের ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে রাজ্যপালের গাড়ি চলে যাওয়ায় বাকি কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর পর রাজ্যপাল পুনরায় ফিরে আসেন। একই ঘটনা ঘটে ঘোষপাড়াতে। সেখানেও রাজ্যপাল বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা না করায় কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় বাসিন্দারা। পরে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্যপাল। শনিবার সন্ধ্যায় বহরমপুর স্টেশনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, “সামসেরগঞ্জে গিয়ে সেখানকার মানুষ কতটা বিপর্যস্ত নিজ চোখে দেখলাম। তবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।”
কিন্তু সামশেরগঞ্জের হিজলতলা সহ অন্যান্য এলাকায় বহু সংখ্যালঘু পরিবার আক্রান্ত হলেও সেখানে রাজ্যপাল বা মানবাধিকার কমিশন যায়নি বলে অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়া ইজাজ আহমেদের বাড়ির লোক শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যপাল আসার অপেক্ষা করেন। তাঁরা ভেবেছিলেন রাজ্যপালের সাথে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরাও আসবেন। কিন্তু শেষে হতাশা প্রকাশ করলেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সুতি থানার সাজুরমোড় এলাকায় ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ গুলি চালায়। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয় এক যুবক। শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাশিমনগর গ্রামের বছর একুশের ইজাজ আহমেদের মৃত্যু হয়। তাঁর বাবা মানারুল শেখ বলেন, “শুনেছিলাম আজ আমাদের এলাকায় রাজ্যপাল আসবেন। আমরা সারাদিন রাজ্যপাল আসবে বলে অপেক্ষা করে আছি। কিন্তু সন্ধ্যা পার হলেও তাঁর দেখা পেলাম না।”
ইজাজ আহমেদের দাদা হায়দার আলী বলেন, “রাজ্যপাল বা মানবাধিকার কমিশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মুর্শিদাবাদে এসেছে। তাঁরা সত্যি যদি আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন, তাহলে আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে, আমাদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতেন। কিন্তু ধুলিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় গেলেও আমাদের বাড়িতে আসেননি তাঁরা। শান্ত মুর্শিদাবাদ কে অশান্ত করতে এসেছেন। রাজ্যপাল খোঁজ না নিলেও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের খোঁজ নিয়েছেন।”
কাশিমনগরের তৃণমূল নেতা জিয়াউর রহমান বলেন, “ধুলিয়ানে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাঁরা মানুষ, আমার এলাকায় যে ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল সে কি মানুষ ছিল না? মানবাধিকার কমিশন কেন তার বাড়িতে এলো না? কেন রাজপাল দেখা করলেন না ইজাজের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে?”
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টিকে বিজেপির রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশল বলে মনে করছে। এক তৃণমূল নেতা বলেন, “নিভিয়ে যাওয়া আগুনে ঘি ঢেলে আবারও পরিস্থিতি অশান্ত করতে রাজ্যপাল মুর্শিদাবাদ এসেছেন। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক চক্রান্তের একটি অংশ। মানবাধিকার কমিশন বা মহিলা কমিশন বাকি আক্রান্তদের খোঁজ কেন নিল না? নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্যই তাঁদের এই নাটক।”
অন্যদিকে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেন, “রাজ্যপালের সামশেরগঞ্জ আসা উচিত হয়নি। রাজনৈতিক নেতারা সেখানে যেতেই পারে, কিন্তু তিনি সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। তিনি যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। তাঁর কাজ ছিল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পর্যালোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।”
শনিবার মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন নবান্নে জমা করা একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, মোট ১০৯ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সামশেরগঞ্জে।
সব মিলিয়ে রাজ্যপাল, মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনের এই সফর একতরফা হওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct