আয়ান মোল্যা, বসিরহাট, আপনজন: এক সময় ফুটপাতে সবজি বিক্রি করতেন আর সেখান থেকে আজ তিনি বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারীক। তবে তাঁর চলার পথটা খুব সহজ ছিল না। নিতান্ত সবজি বিক্রেতা বাবার সঙ্গে নিজেও সবজি বিক্রি করতেন আবার স্কুলে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে সবজি বিক্রি করা এভাবে চলত ছোটবেলায় লড়াইয়ের দৈনন্দিন রুটিন। শ্যামলবাবুর বাবার সাধ ছিল ছেলেকে ডাক্তার করার। ছেলেও বাবার ইচ্ছেকে তেমনই মর্যাদা দিয়েছেন।
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ডেপুটি সিএমওএইচ শ্যামল কুমার বিশ্বাস। ছোট থেকেই অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা শ্যামল বিশ্বাসের। তাঁর বাবা স্টেশনে সবজি বিক্রি করতেন। বাবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সবজি বিক্রি করতেন শ্যামলবাবুও। ছোট থেকে দারিদ্রতাকে আঁকড়ে ধরে বড়ো হলেও পড়াশোনায় ত্রুটি ছিল না তাঁর। বর্তমানে সরকারি বড় পদে আসীন হলেও সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলোর খোঁজখবর নিতে আজও তিনি ভোলেন না।
তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরে। নিজে গরিব ঘরে জন্মগ্রহন করে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেজন্য আজও গরিবের ব্যাথায় প্রাণ কাঁদে তাঁর। বহু গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেন তিনি। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি সাক্ষাৎ যেন ঈশ্বরের দূত। ডাক্তারির মাধ্যমে নিজেকে তিনি নিয়োজিত করেছেন মানবসেবার কাজে। একদিকে অফিসে নিজের কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফেরার পর ছুটে যান নিজের চেনা হৃদয়পুর রেলস্টেশন, সড়ক পথে অসহায় দুঃস্থ মানুষের মুখে দুটো খাবার, বস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য। প্রাকৃতিক যেকোন বিপর্যয়েও তিনি থেমে থাকেন না। মহারাষ্ট্রের লাথুরের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় ছুটে গিয়ে টানা সেবা করেছেন আহত মানুষদের।
করোনার সময়ও সমানভাবে নিরন্তন চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে গেছেন এই চিকিৎসক। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও কার্যত নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও রোগী দেখে গিয়েছেন শ্যামলবাবু। মানবদরদী চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাসকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন নানা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ডাক্তারবাবু সত্যিই আজ এলাকার মানুষের কাছে সাক্ষাৎ ভগবানের দূত। আসলে শ্যামল বাবুর মতো চিকিৎসকরা ছোট থেকে স্বচক্ষে অভাব অনাটন আর লড়াই সংগ্রাম দেখে বড় হয়েছেন সেজন্যই হয়তোবা অবস্থা দেখে চুপ থাকতে পারেন না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct