সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে তীব্র অশান্তি। বিশেষ করে সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ এলাকা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল শুক্রবার। বিক্ষোভ ঘিরে দেখা দিয়েছিল গুন্ডামি, যার ফলে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলা, পালটা লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, এমনকি গুলিচালনার ঘটনাও ঘটেছে। রবিবার ভোররাত অব্দি গুলিবিদ্ধ হয়েছে মোট আট জন, তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সামশেরগঞ্জে দু’জনকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে, ময়দানে নেমে পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।
রবিবার সকাল থেকে নতুন করে কোন উত্তেজনার খবর না থাকলেও পরিস্থিতি সব এলাকায় থমথমে রয়েছে। রবিবার সুতির বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খুললেও সামশেরগঞ্জ তথা ধুলিয়ানে বাজার প্রায় বন্ধ।
এই অশান্তির নেপথ্যে বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল কংগ্রেস। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান ও ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, “অশান্তির পেছনে বাইরের লোক জড়িত। তাঁদের মতে, স্থানীয়দের অনেকেই অশান্তিকারীদের চিনতে পারছেন না।” তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি ও বিএসএফ-এর একাংশ যৌথভাবে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে। এমনকি এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বিজেপি নেতাদের ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য শোনা গিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। যেখানে ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিংকে বলতে শোনা গিয়েছে ‘উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে ঠান্ডা করে দেব।’ অন্যদিকে এই নিয়ে মালদা দক্ষিণ লোকসভার সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা ইশা খান চৌধুরী রবিবার সামশেরগঞ্জ থানায় উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাঝে কয়েকজন যুবক ঢুকে গিয়েছিল। তারপর পরিস্থিতি অশান্ত হতে থাকে। আমি প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখেছি।”
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি লিখে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন। রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি শান্ত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, “দুষ্কৃতিদের হামলা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।”
অশান্ত পরিস্থিতিতে ধুলিয়ানের বহু মানুষ ঘর ছেড়ে গঙ্গা পেরিয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরে আশ্রয় নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের ঘরে ফেরাতে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, আমরা ঘরছাড়া দের দ্রুত ঘরে ফিরিয়ে তাঁদের যথোপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ পুলিশ অফিসারদের জঙ্গিপুরে বিশেষ ডিউটিতে আনা হয়েছে। সামশেরগঞ্জ থানার ওসি শিবপ্রসাদ ঘোষকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় অমিত ভকতকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সামশেরগঞ্জ থানায় দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন।
জঙ্গিপুর মহকুমায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধৃতদের সংখ্যা দু’শো ছাড়িয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে আরএসএস ঘনিষ্ঠ তিনজন শিল্পপতিও রয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
রবিবার সকাল থেকেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে অবস্থা বজায় রয়েছে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে ও গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
এদিকে, বিজেপির তরফে সমাজমাধ্যমে যেসব অশান্তির ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেগুলিকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করেছে রাজ্য পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, সেগুলি পুরনো সময়ের ছবি, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এখনও
থমথমে পরিস্থিতি সুতি, সামশেরগঞ্জ সহ সমগ্র জঙ্গিপুর মহকুমা এলাকা। সবমিলিয়ে বহিরাগতদের সম্প্রীতি নষ্টের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে উঠেছিল বলে দাবি শাসক দল ও জেলা প্রশাসনের।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct