নিজস্ব প্রতিবেদক, হাওড়া, আপনজন: রাজ্যজুড়ে এক একে নতুন শাখার সুচনা করে আল আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। বৃহস্পতিবার এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আল-আমীন মিশনের আর এক নয়া দিগন্ত হাওড়ার নয়াবাজ শাখার নতুন ভবনের সূচনা করেন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম।
এই শুভক্ষণে তিনি বলেন, মিশনের প্রতিষ্ঠা থেকেই ঘটা করে সাজিয়ে গুছিয়ে কোনও ক্যাম্পাস আরম্ভ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। অতোটা সময় আমরা পাই না। আমাদের মাথায় থাকে যত তাড়াতাড়ি হস্টেল শুরু করা যায় কারণ পড়ুয়াদের পড়াশোনা আরম্ভ করার গুরুত্বই আমাদের কাছে সর্বাধিক। পাশের বেসরকারি জে আই এস মেডিকেল কলেজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে পয়সা খরচ করে ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বভারতীয় নিটে সফল হয়ে সরকারি কলেজে নিখরচায় পড়ছে শত শত ছাত্র-ছাত্রী। নয়াবাজ শাখার প্রায় ১০০০ জন পড়ুয়া সরকারি কলেজ থেকে ইতিমধ্যেই এম.বি.বি.এস. পাস করেছে কিংবা এখনও পড়ছে। তিনি আরও বলেন, হাওড়া জেলার বাঁকড়া এলাকার অনেকেই ছোটোখাটো ব্যবসা বানিজ্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে অধিকাংশজনই শ্রমজীবী কারিগর। তাঁদের মাঝে শিক্ষার কাফেলা নিয়ে বহুদিন আগেই আমরা হাজির হয়েছি। এতোদিন এই শাখার ছাত্ররা ভাড়া করা বিল্ডিংয়ের হস্টেলে থেকেছে। নতুন সেশনে সমস্ত ছাত্রই নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। পুরনো বিল্ডিং কেবলই আকাডেমিক কাজের জন্যে ব্যবহৃত হবে। খুবই কম সময়ে ৭ তলা বিশিষ্ট এই হস্টেলের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৪০০ জন আবাসিক ছাত্র এই ভবনে থাকতে পারবে। ২০১২ সালে আমরা যখন এই শাখা শুরু করি, তখন এখানে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করতে রাজী হচ্ছিলেন না। একেবারে জোর করে কম ফীজে ভালো ছাত্রদের আমরা এখানে পাঠিয়েছিলাম। সেই সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি জানান চাপড়ার তিনজন মেধাবী ছাত্রকে খুবই কম ফিজে এখানে ভর্তি করা হয়। ওই তিনজন সহ আরও অনেকেই প্রথম বছরেই এই শাখা থেকে সফল হয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। এর পর নয়াবাজ শাখাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
পাশাপাশি মিশনের অন্যান্য ক্যাম্পাসেও প্রত্যেক বছরই উত্তরোত্তর ভালো রেজাল্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ-বছর আমাদের জন্যে চ্যালেঞ্জ হল, দু-একটা নতুন শাখাকে এই সব সফল ক্যাম্পাসের সঙ্গে এক কাতারে তুলে আনা।
তিনি জানান, এই শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে প্রায় ২৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী মিশনে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নিজস্ব মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী এবং বাকি অংশ বাইরের ছাত্র-ছাত্রী। তিনি আরও জানান, হস্টেলের অপ্রতুলতার কারণে একাদশ শ্রেণির প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রায় ৭ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৩.৬ শতাংশকেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিতে সক্ষম হয়েছি। তাঁর মতে, প্রায় চার দশক পরে মিশন আজকাল প্রত্যেক দিনই ইতিহাসের নতুন নতুন পৃষ্ঠার জন্ম দিচ্ছে। এই এলাকায় মিশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জটিল সমস্যা কাটিয়ে ওঠা বিষয়ে আলোচনা করেন মিশনের স্টাডি সার্কলের ডিরেক্টার দিলদার হোসেন।
সহকারী সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজুর রহমান মিশনের তরফে ছোটো ঘরোয়া অনুষ্ঠানের উপযোগিতা বিষয়ে আলোকপাত করেন। মিশন পরিবারের পক্ষে মহ. আলমগীর বিশ্বাস, নুরুল আনোয়ার, শিক্ষানুরাগী গিয়াসউদ্দিন মল্লিক, সফিউদ্দীন মল্লিক প্রমুখ সহ মিশনের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়া ও অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মিশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হাসিব আলমের দোওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিচালনায় ছিলেন নয়াবাজ শাখার সুপারিন্টেনডেন্ট খন্দকার মহিউল হক ও তাঁর সহযোগীবৃন্দ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct