আপনজন ডেস্ক: রাজ্যের স্কুলগুলিতে ২৫,৭৫২জন শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে চরম সঙ্কটে পড়েছেন বাতিল হওয়া যোগ্য ও অযোগ্য উভয় শিক্ষকরাই। স্কুলে পঠনপাঠন শিকেয় ওঠার জোগাড় হওয়ায় প্রবল সমস্যার মুখে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা বিভাগ। সেই পরিস্থিতির নিরসনে সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিচ্যুত স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যা দূরীকরণে নানা পরিকল্পনার কথা জানান তাদের। আপাতত তারা যাতে প্রকৃতপক্ষে চাকরিচ্যুত না হন তার জন্য বকলমে ‘স্বেচ্ছাসেবী’ শিক্ষক হিসেবে স্কুলের শিক্ষকতায় নিয়োজিত করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। যেহেতু আদালতের রায়ে সরাসরি চাকরি বহাল রাখা বেআইনি হবে, তাই আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবধি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ করে দিতে চান চাকরিচ্যুত যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের। তবে, এদিন মমতার বৈঠকে যোগ্য প্রার্থীরা দাবি তোলেন তাদের তালিকা আলাদা করে ঘোষণা করার। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
সুপ্রিম কোর্টকে স্পষ্ট করতে হবে কে যোগ্য আর কে নয়। সুপ্রিম কোর্টকে বলব আমাদের তালিকা দিন। শিক্ষা ব্যবস্থা ভাঙার অধিকার কারও নেই। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম কাণ্ডে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারা আজ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পায়নি। নিট-এ উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা বাতিল করেনি। কেন বাংলাকে টার্গেট করা হচ্ছে? আমরা জানতে চাই। সেজন্য যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকাটা আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে চাইব বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী চাকরিচ্যুতদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, যোগ্যদের চাকরি আমি কাড়ব না। আমি আদালতে যাব। আমি আদালতের ক্ল্যারিফিকেশন নেব। আদালতের নির্দেশ আমরা মেনে চলব। আমাদের রিভিউ পিটিশনও করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি আমাদের স্পষ্টতা দেয়, তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। যদি তা না হয় তবে আমরা একটি উপায় খুঁজে বের করব এবং আপনার পাশে দাঁড়াব। দু’মাস ভুগছেন, ২০ বছর ধরে কষ্ট করতে হবে না। আর ওই দুই মাসের জন্যও আমি ক্ষতিপূরণ দেব। আপনাকে ভিক্ষা করতে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা পরিকল্পনা যে মাথায় রেখেছেন তা সাফ জানিয়ে দেন। এ নিয়ে বলেন, আমাদের প্ল্যান এ, বি, সি, ডি এবং ই প্রস্তুত আছে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, ভরসা রাখুন। মাথার উপরে আমরা আছি, কারও প্রতি কোনও অবিচার হবে না। এটা আমি কথা দিয়ে গেলাম।
ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা স্বেচ্ছাসেবী পরিষেবা দিতে পারেন। আমি ভলান্টিয়ারির কথা বলছি, কোর্টের কথা মাথায় রেখে। কোর্ট আমাকে বলতেই পারে আমি বাতিল করলাম তুমি কেন যেতে বলছ? কিন্তু ভলান্টিয়ারি সার্ভিস সবাই দিতে পারেন। সরকার তো আপনাদের তাড়িয়ে দেয়নি। তাই এ নিয়ে বুদ্ধি খরচ করতে হবে।
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি পর্যালোচনা পিটিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে এবং হাজার হাজার স্কুল পড়ুয়ার ভাগ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাইবে যাদের শিক্ষকরা আদালতের আদেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আগে আমাদের যোগ্যদের পরিস্থিতি ঠিক করতে দিন। আমি আবার ডাকব। বাদ বাকি যারা থাকবেন যাদের অযোগ্য বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দেখব কী এভিডেন্স আছে। আমি আবার ডাকব।
যোগ্য–অযোগ্যর মধ্যে বিভেদ না করার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, আমাদের তদন্তটা করতে দিন। আইনের ধারা অনুযায়ী কাজ করব। কারও চাকরি খাওয়া আমাদের ধর্ম নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা যারা কাজ করছেন, তারা যেন সেইভাবে কাজ করে যান। আর তারা যাতে তাদের পুরনো চাকরি ফিরে পান তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনে নামজাদা আইনজীবীদের নিয়োজিত করার ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা অভিষেক মনু সিংভি এবং কপিল সিব্বলকে জিজ্ঞাসা করছি, প্রশান্ত ভূষণ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও অনেক আইনজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করব যারা রাজ্য সরকারের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন এবং যোগ্য প্রার্থীদের হয়ে লড়াই করবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct