আপনজন ডেস্ক: গাজার বাসিন্দারা টিনজাত খাবার খেয়ে টিকে আছে বলে জানিয়েছে। কারণ ইসরায়েলের অবরোধের ফলে ১০ দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান সতর্ক করেছেন, সীমান্ত বন্ধ থাকায় তাজা খাদ্য পচে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান টম ফ্লেচার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, গাজার প্রবেশপথগুলো খাদ্যবাহী কার্গোর জন্য বন্ধ থাকায় ‘খাদ্য পচছে, ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম সেখানে আটকে আছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বিচার হামলা, জীবনরক্ষাকারী সহায়তা আটকে দেওয়া, বেসামরিক জনগণের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং জিম্মি করে রাখার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে...যদি মানবিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো এখনো কার্যকর থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই এগিয়ে এসে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ফ্লেচারের এই মন্তব্যের মধ্যেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানায়, গাজায় তাদের মজুদ খাদ্য এখন মাত্র পাঁচ হাজার ৭০০ টন, যা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের জন্য কার্যক্রম চালানোর মতো পর্যাপ্ত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ইসরায়েলি অবরোধের ফলে খাদ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২৫ কেজি গমের আটা এখন ৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা ১৮ মার্চের আগের দামের তুলনায় ৪০০ শতাংশ বেশি।
মার্চের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে হামাস সম্মতি না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে হামাস এই প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে রাজি হয়নি। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে চেয়েছে, যেখানে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা হবে।
‘টিনজাত খাবারেই বেঁচে থাকা’
উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি বাজারে খাদ্যের সরবরাহ সীমিত, মূলত টিনজাত খাবার ও দামি সবজির মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ।
সবজি বিক্রেতা মুস্তাফা হুমাইদ আলজাজিরাকে বলেন, ‘বাজার প্রায় ফাঁকা, কারণ জিনিসপত্রের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ কিনতে পারছে না।’
তিনি আরো জানান, ‘এক কেজি টমেটোর দাম তিন গুণ বেড়েছে। আমার নিজের পরিবারের জন্যই খাবার কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাহলে অন্যরা কিভাবে টিকে আছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।’
জাবালিয়ারই এক শিশু আহমেদ বালোশা জানায়, দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পরিবার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাজা মাংস খেতে পারেনি।
সে বলেন, ‘আমরা শুধু টিনজাত খাবার, কিছু রুটি আর পনির খেয়ে বেঁচে আছি। এর বেশি কিছু নেই।’
এদিকে তীব্র খাদ্যসংকটের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা চলছে। ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল যুদ্ধ ফের শুরু করার পর থেকে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ২৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরই এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct