নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে এক মনোজ্ঞ সেমিনার ও ইফতার মজলিশের আয়োজন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানটি ছিল দুটি ভাগে। প্রথম ভাগে বেলা দুটো থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেপি বসু মেমোরিয়াল হলে হয় ‘রমজানের প্রভাব: সার্বজনীন হৃদয় সংযোগ’ শীর্ষক সেমিনার। এরপর সন্ধ্যায় ওপেন থিয়েটার হলে হয় ইফতার মজলিশ।
কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সেমিনার। সঙ্গে ইংরেজি ও বাংলা অর্থও শোনানো হয়। অতিথিদের গাছ দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ তথা দ্বীনিয়াত মুয়াল্লেমা কলেজের কর্ণধার হায়দার আলির সভাপতিত্বে শুরু হয় সেমিনারের বক্তৃতা প্রদান। প্রথমেই বক্তৃতা দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ভাস্কর গুপ্ত। তিনি রোজা এবং সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বর্ণতা দিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের সৌহার্দ্য স্থাপনের অনুষ্ঠান বেশি বেশি করে করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানের মতো এমন এক জায়গায় সবাই মিলে দাঁড়ানো দরকার যেখানে সবাই একসঙ্গে ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের মানুষ মনে করতে পারি। আর মানুষ হিসেবে সবাইকে গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন দেশে তার বিপরীত ভাবনার চর্চাটাই বেশি করে হচ্ছে।
উপচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলেন, দেশ এমন একটা জায়গায় চলে যাচ্ছে যা দেখে দুঃখ লাগে। এখন গণতন্ত্রের নামে সংখ্যাগুরুদের মনোভাবকেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র মানে তা নয়। গণতন্ত্রে তোমরা, আমার বলে কিছু থাকে না। তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে যাদবপুরে পড়াচ্ছি তার মধ্যে দেশবিদেশের মধ্যে দুজন ভাল বন্ধু পেয়েছি। একজন তুরস্কের মুসলিম ও অন্যজন জাপানের বৌদ্ধ।
তিনি বলেন, সবাই মিলে যদি এক জায়গায় এসে দাঁড়াতে পারি সেটাই সার্থকতা। বিশ্বে রমজান বা ঈদের সময় মধ্যে একটা আলাদা জিনিস দেখা যায়, যা বিরল তা হল, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি প্রদান। অর্থাৎ মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশে এখন বিদ্বেষের বীজ চাষ হচ্ছে। তার দূর করতে এই ধরনের অনুষ্টানের প্রয়োজন আছে। কারণ, আমরা বাংলার ইতিহাস ভলে যাচ্ছি। আমাদের ইতিহাস যে কাজী নজরুল ইসলামে তা ভুলে যাচ্ছি, আমাদের ইতিহাস যে কুরআনের প্রথমা বাংলা অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের তা ভুলে গেছি। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভালবাসার বন্ধনে সম্পর্ক তৈরি করে বিভেদ ঘুচে সমাজকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। বিশ্বভারতী বিধ্ববিদ্যারয়ের অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম কুরআনের বিভিন্ন আয়াত তুলে ধরে বিশ্বজনীনতার আদর্শ বর্ণনা করেন। রোজায় যে গুরুত্ত্ব, আত্ম সংযম, অহিংসা তার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
কলকাতার আইএসআইয়ের অধ্যাপক ড. গৌতম পাল নানা ধর্মের মূল কথা যে মানবিকতা তার নানা উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, একটা জাতির, দেশ গঠনে ধর্ম ও নীতির ভূমিকা, ধর্মের তাৎপর্য,ও গুরুত্ব সমাজে অপরিসীম। তাই মানবিকতাকে ভিত্তি করে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক অধ্যাপক ড. মুক্তিপদ সিনহা বলেন, বর্তমানে হিংসার যে বীজ বপন হচ্ছে দেশে, তার জন্যে এই ধরনের সেমিনারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর ইফতার মজলিশ হচ্ছে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র। কে কোন ধর্মের, কোন বর্ণের না দেখে পাশাপাশি বসেই ইফতার করা হয়। এটা ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ। এই
দারুল উলুম দেবওন্দের মুফতি উসমান গণিকুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে কুরআনের মর্মবাণী তুলে ধরেন।
যাদবুপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক রহমান, রমজান কি ও রোজা রাখা এবং সিয়াম সাধনার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আয়াতুল্লাহ ফারুক বলেন, সব ধর্মেই কিছু ভাল ভাল কথা আছে সেগুলোকে বেছে নিতে হবে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম গণিতের ভাষার সঙ্গে তুলনা করে এদিনের সেমিনারে মূল থিমের প্রাসঙ্গিকতা বর্ণনা করেন। এদিনের সেমিনারে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরুদ্দিন আহমেদ, েএমকে কামরান মণ্ডল, আপনজন সম্পাদক জাইদুল হক, আল আমীন মিশনের মহসীন আলি প্রমুখ।
এদিনের সেমিনারটি সঞ্চালন করেন আশিকুল খান ও সাদিক। আহ্বায়ক ছিলেন সিদ্দিক। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন, জাহিত, সৈকত, শাকিল, রাকিব, রাসেল, মাহবুব, আমান, আজিজ সরওয়ার, সাদিরুদ্দিন, সাহিল, সোহের, সরফরাজ, রিয়াজ, নাজির, আসিফ, অনীকম উসায়ের, বাগবুল প্রমুখ। প্রাক্তনীদের মধ্যে বিশেষবাবে সক্রিয় ছিলেন সায়ীদুল ইসলাম, রবিয়াহা সালাম।
তবে, এদিন ওপেন থিয়েটারে ইফতার মজলিশের সময় একটি ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ইফতার মজলিশে প্রবেশের সময় দু নম্বর গেটের কাছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যারয়ের এক ছাত্রী দেবাঙ্গনা ব্যানার্জি তার দামি আইফোনটি হারিয়ে ফেলেন। ইফতার মজলিশে তাই কান্না ভরা চোখে ছাত্রীটি আর্জি জানান ফোনটি খুঁজে পেলে জমা দেওয়ার জন্য। অবশেষে ফোনটি কেউ পেয়ে মঞ্চে জমা দিলে তা ফিরে পান ছাত্রীটি। তা নিয়ে ওই ছাত্রীটি ইফতার মজলিশে রোজার মাহাত্ম্য তুলে দরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে আবেগন পোস্ট করেন যা ভাইরাল হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct