আলিয়া মাদ্রাসার উন্নীত ও রূপান্তরিত রূপ হচ্ছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৭ সালে বিধিবদ্ধ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঘটে এই রূপান্তর। বাংলার মুসলমানদের কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত আবেগের তার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। সবকিছুকে বাদ দিয়ে একটাই কথা বলা যায় বাংলার একমাত্র সংখ্যালঘু স্বশাসিত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নতুন উপাচার্যর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন মুহাম্মাদ আবদুল মোমেন।
আলিয়া মাদ্রাসার উন্নীত ও রূপান্তরিত রূপ হচ্ছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৭ সালে বিধিবদ্ধ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঘটে এই রূপান্তর। বাংলার মুসলমানদের কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত আবেগের তার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। সবকিছুকে বাদ দিয়ে একটাই কথা বলা যায় বাংলার একমাত্র সংখ্যালঘু স্বশাসিত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নয় নয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়াটা ঊনিশ বছর পার করে ফেলেছে। এই ঊনিশ বছরে পূর্ণ মর্যাদার উপাচার্য পেয়েছে চার জন। ইতিপূর্বে আলিয়া থেকে তিন জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে সদ্য সদ্য যোগদান করেছেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। যোগদান করার পর এমনকি উপাচার্য হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে মহামান্য উপাচার্যের দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। সেই হিসেবে বলা যায়, নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য ব্যাক্তির হাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলার শিক্ষানুরাগী মুসলমান সমাজের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যেহেতু আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা রয়েছে স্বাভাবিক ভাবে সেই প্রত্যাশার ভারটা দক্ষ উপাচার্যের উপরই পড়ে।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ঘোষণা ছিল - আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি বিশ্ব মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষনা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক, গভীর আশায় বুক বেঁধে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত আশা পূরণ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। এর জন্য সরকারের দায় নেই, দায়ী প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা ও প্রশাসনিক সমস্যা। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয় নয় করে তিন জন পূর্ণ সময়ের উপাচার্য চলে গেছেন। কার্যনিয়ামক বা তাৎক্ষণিক উপাচার্যও গেছেন তিন জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থার বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। ওয়াকিবহল মহলে তেমনই চর্চা রয়েছে। আভ্যন্তরীণ সমস্যা ও প্রশাসনিক দড়ি টানাটানির ফলে এমন অবস্থা বলে উল্লেখিত মহলের ধারণা। এখানে প্রতিষ্ঠানের শ্রীবৃদ্ধি ও গৌরবের থেকে প্রলম্বিত “ব্যাক্তিকেন্দ্রীকতার ছায়া” বলে তাদের ধারণা। যার ফলে প্রথম উপাচার্য ড. সৈয়দ শামসুল আলম ছাড়া বাকি দুই উপাচার্য দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা অস্থিরতা সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যায়জুড়ে।
প্রথম জন বাদ দিয়ে বাকি দু’জনকেই চরম অপমানিত ও হেনস্থা হতে হয়েছে। বিশেষত অধ্যাপক ড. আবু তালেব খানের বিরুদ্ধে ডানপিটে ছাত্রদেরকে লেলিয়ে দিয়ে চরম হেনস্থা এমনকি শারিরীক নিগ্রহ পর্যন্ত করানো হয়। কায়েমী স্বার্থ গোষ্ঠী; ছাত্রদের ‘ভিসি তাড়াও আলিয়া বাঁচাও’ আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কার্যত ওনাকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও একজন সন্মানীয় উপাচার্য সম্পর্কে এমন শব্দ ব্যবহার করা শোভনীয় নয় কিন্তু যেটা ঘটেছিল সেটা জাতির জানা উচিত। আমার ধারণা এখনও পর্যন্ত কর্মচঞ্চল কর্মদ্যোগ কর্মদক্ষতায় সেরা উপাচার্য তিনি। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড তিনি নির্বিবাদে চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাই তাঁর বিরুদ্ধে অপশক্তি লেগে পড়েছিল, এমন মন্তব্য নানা জনের থেকে শোনা যায়। সর্বশেষে মেয়াদ শেষ করে চলে যাওয়া উপাচার্য ড. মোহাম্মাদ আলিকে কেন্দ্র করে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিরোধ তেরি হয় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে। ওনার সময়ে দীর্ঘ দেড় বছর আর্থিক অবরোধের মধ্যে পড়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যুতের বিল না মেটাতে পারার জন্যে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার নোটিশ পর্যন্ত ধরানো হয়। একই কারণে ওয়াইফাই সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে এটা কত বড় অপমান তা ভাবতে হবে!
অন্যদিকে, মামলা চলার কারণে প্রয়াত প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার ডঃ আনোয়ার হোসেন দফাদার পেনশন পাননি। ওনার স্ত্রীরও আজ পর্যন্ত ফেমিলি পেনশন শুরু হয়নি। আনোয়ার হোসেন পরিবারের করুণ অবস্থার দিকে সংশ্লিষ্টদের কেউ ফিরে তাকানোর কেউ নেই। পূরনো কাসুন্দি আর না ঘেঁটে ভবিষ্যতের দিকে নজর দেওয়া উত্তম মনে করছি।
নতুন উপাচার্য যোগ দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি দক্ষ ও যোগ্য মানুষ, তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। আলিয়ার প্রাক্তনী, অনুরাগীসহ সংখ্যালঘু সমাজের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। নতুন উপাচার্যের উদ্দেশ্যে সেগুলোর একটা ছোট্ট স্মরণিকা এমন হতে পারে-
প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ টি খান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৭-এ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী চেয়ে সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব এর নিকট সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ। সংশোধনগুলো একান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপযোগীও। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর অতিক্রান্ত হলেও কোথায় পড়ে আছে তার কোনও সন্ধান করা হয়নি। আশা করা যায় মাননীয় উপাচার্য সেই ফাইলটা খোঁজ করবেন।
পার্কসার্কাস গোরাচাঁদ রোডে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন প্রায় দশ বিঘে জমি রয়েছে যার প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের নজর রয়েছে। তারা ওটার থেকে বেশ কিছুটা অংশ পেতে চায় কিন্তু উপাচার্য ডঃ এটি খান ওই জায়গাকে নিয়ে মাল্টি কমপ্লেক্স প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে গেছেন। যেমন স্টেডিয়াম থেকে বয়েজ, গার্লস হোস্টেল, আইন বিভাগ প্রভৃতি আরও অনেকগুলো কর্মসূচি রয়েছে তার মধ্যে। যতটুকু জানি প্রকল্পটি উপযুক্ত কতৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিতও হয়ে আছে। কিন্তু আবু তালেব চলে যাওয়ার পর প্রকল্পটির কি অবস্থা তা জানা নেই। নবনিযুক্ত উপাচার্য মহাশয় বিষয়টি দেখলে আলিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো গড়ে উঠবে।
মেইন অর্থাৎ নিউটাউন ক্যাম্পাসের অনুমোদিত প্লান আঠেরো তলা। অথচ হয়েছে মাত্র আট তলা। বিল্ডিংটি আঠেরো তলা পর্যন্ত উঠুক সেই প্রত্যাশা আলিয়া অনুরাগীদের। মাননীয় উপাচার্য সেটাও দেখবেন। নিউটাউন ক্যাম্পাস সংলগ্ন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য মাত্র দুটি হোষ্টেল রয়েছে। হোস্টেল দুটিই ‘মিরর ফেসিং’ প্রকল্প হিসেবে অনুমোদিত অর্থাৎ আরো দুটি দুই গা ঘেঁষে হওয়ার কথা। সেটা হলে জেলার থেকে আসা ছাত্র ছাত্রীদের থাকার সুযোগ আরও বাড়তে পারে। প্রকল্পটি পূর্ণ হোক আলিয়া অনুরাগী ও ছাত্র ছাত্রীদের আশা। নাহলে আগামী দু’চার বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা তলানিতে ঠেকার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস অর্থাৎ তালতলা ক্যাম্পাস, যেটা “আলিয়া মাদ্রাসা” - সংলগ্ন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের বেগম রোকেয়া ভবনের পাশের জায়গা যেটা আলিয়ারই সম্পত্তি সেটা এবং পুরনো মাদ্রাসা পর্ষদ ভবন যা মহশিন ভবন নামে পরিচিত তার একটা তলা মাওলানা আজাদ কলেজের দখলে চলে গেল। অথচ আমার যতটুকু জানা ওই স্থানে আলিয়ার গার্লস হোস্টেলের প্রকল্প বানিয়ে ছিলেন উপাচার্য এ টি খান। এমনকি বেগম রোকেয়া ভবনটার দাবিও জানিয়েছিলেন বলে ওনার থেকে শুনেছি। ওই প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম পাঠক্রম থাকলেও এলএলবি নেই। এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠক্রম নেই, সোশিওলজি নেই। বি এস ডব্লিউ এম এস ডব্লিউও নেই। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠক্রম গুলো নেই কেন তার কারণ অনুসন্ধান করবেন এবং চালু করার ব্যবস্থা করবেন এমন প্রত্যাশা অবান্তর নয়।
পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে অডিটরিয়াম আছে কিন্তু নিউটাউন ক্যাম্পাসে অডিটরিয়াম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অডিটরিয়াম কথটা দরকারি তার ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন নেই। সেই চাহিদা পুরণ করার ব্যবস্থা করবেন।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাকাল্টি রয়েছে কিন্তু ফ্যাকাল্টিতে স্থায়ী শিক্ষক পর্যাপ্ত নেই, অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই সমস্যার ধরন সম্পর্কে উপাচার্য মহাশয়েকে বোঝানোর প্রয়োজন হয়না। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপডি কর্মীর প্রায় সমস্তটা অস্থায়ী। অথচ তারা দশ থেকে পনেরো বছর ধরে কাজ করছেন কিন্তু স্থায়ী হয়নি। স্থায়ীকরণের উদ্যোগ কতৃপক্ষের ছিল না। একটা উচ্চ ও বৃহত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য চুক্তি ভিত্তিক কিম্বা অস্থায়ী কর্মী নির্ভরযোগ্যতা কতটা উপযোগী!
সর্বোপরি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মর্যাদার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করবেন এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আলিয়া মাদ্রাসা হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। যে আলিয়া মাদ্রাসার নতুন করে পরিচিতি দেওয়ার অর্থ সময় ও পরিসরের অপচয়। ওয়ারেন হেস্টিংস প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সেই মাদ্রাসা রূপান্তরিত হতে হতে বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৭” এ সেই ঐতিহাসিক তত্ত্বকে আইনের ভূমিকা অংশে সে তত্ত্ব রক্ষা ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। কেবল ঐতিহাসিক তত্ত্ব সংরক্ষণ করেই থেমে থাকেনি; আলিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যের পরিপূর্ণ ধাকরক ও বাহক হওয়ার প্রতিশ্রুতিও রাখা হয়েছে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইনের চ্যাপ্টার- ২ এর ৩ নং ক্লজে তার স্পষ্টিকরণ রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের তরফ থেকে আলিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্য ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পরিসর রয়েছে কিন্তু সেটা প্রতিবেদনের উপজীব্য নয়। কেবল এতটুকু উল্লেখ করা আবশ্যিক মনে করি, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পিছনে আলিয়া মাদ্রাসা এবং সর্বোপরি মাদ্রাসা ছাত্র এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অনুরাগীদের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের অবদান রয়েছে। পরিস্কার করে বলতে গেলে বলতে হয় বর্তমানের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি, থিওলজি ও ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ছাত্র ছাত্রীদের পূর্বসূরীদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিতাপের বিষয় উক্ত মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টিগুলিই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত।
কেবল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামের সাথে মাদ্রাসা কথাটির সম্পৃক্ততাই যথেষ্ট নয়। প্রত্যেকটা পরতে পরতে জুড়ে রয়েছে মাদ্রাসা আর মাদ্রাসা। আশাকরি মহামান্য নবনিযুক্ত উপাচার্য মহাশয় আলিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যকে স্মরণে রাখবেন।
লেখক আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার-সাতুলিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষক ও আলিয়ার প্রাক্তনী
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct