আপনজন ডেস্ক: রাজ্যবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শনিবার ব্রিটেন সফরে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি রাজ্যে না থাকলেও এখানকার বিষয়গুলির উপর সর্বদা নজর রাখবেন।
তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক এই কামনা করি। আমি নিশ্চিত এই ঐতিহ্য অব্যাহত থাকবে। আমি বিদেশে অবস্থানকালে (কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে) যোগাযোগ রাখব। তিনি আরও বলেন, মাত্র চার-পাঁচ দিনের ব্যাপার আমি এখানে থাকব না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে শাটডাউনের কারণে তার সফরসূচি ব্যাহত হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমাদের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক বৈঠক রয়েছে। দেখা যাক কীভাবে তাদের জায়গা দেওয়া যায়, কিছু কাটছাঁট করে নতুন করে সাজাতে হবে। দেখা যাক কীভাবে ম্যানেজ করা যায়। ২৪ মার্চ লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
২৫ মার্চ গত মাসে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে (বিজিবিএস) প্রাপ্ত বিনিয়োগ প্রস্তাবের ফলোআপ নিয়ে একটি বৈঠক হবে। ২৬ মার্চ জিটু-সরকার (জিটুজি) অনুষ্ঠানে এবং ২৭ মার্চ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এ জাতীয় আরেকটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী অংশ নেবেন। আগামী ২৯ মার্চ কলকাতায় ফিরবেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এটি তার দ্বিতীয় ব্রিটেন সফর হবে। প্রথমটি ছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরে। গত সপ্তাহেই তাঁর সফরে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র।
অন্যদিকে, শনিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার দেখা যায়। কলকাতায় ‘অধিনায়ক অভিষেক’ লেখা বিপুল সংখ্যক পোস্টার ও হলুদ পতাকা পাওয়ার একদিন পরেই এই পোস্টারগুলি সামনে এল।
মজার ব্যাপার হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টারের ঠিক পাশেই দেখা গিয়েছে তার ভাইপো তথা তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার। তৃণমূলের অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া সেল এফএএম (ফিয়ারলেস এআইটিসি মেম্বারস)-এর তরফে মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টার লাগানো হয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপো তথা দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্য’ কয়েক মাস পরে ‘সঙ্কুচিত’ হয়ে এসেছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, বিশেষ করে দলের যুব শাখা মনে করছে, এটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামব্যাক এবং তাকে ফের ‘ক্যাপ্টেন’ পদ দেওয়া হল। তাই ওরা এই ধরনের পোস্টার দিয়ে উৎসব করছে।
এদিকে, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তিনি পুরো দলের দেখভাল করবেন এবং কোনও সন্দেহ নেই যে তিনি দলের সুপ্রিমো। তিনি কয়েকজনকে মাত্র সাত দিনের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই তাতে কিছু যায় আসে না।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার পরে কিছু বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের থেকে আলাদা অবস্থান নেওয়ায় জল্পনা শুরু হয় মমতা-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ‘দূরত্ব’ বৃদ্ধি নিয়ে। রাজ্যে শাসক দলের অন্দরে পুরনো ও নতুন রক্ষীদের মধ্যে বিস্তর ফাটলের মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে মমতা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। রাজ্য বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমি দলের চেয়ারপার্সন, আমিই শেষ কথা।
বৃহস্পতিবারই লন্ডন সফরে যাওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা ঘোষণা করেন। তার গঠিত এই টাস্ক ফোর্সে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব বিবেক কুমার ও প্রভাত মিশ্র, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে গঠিত প্রবীণ মন্ত্রীদের একটি দল আমলাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সুব্রত বক্সী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কাজকর্ম দেখবেন বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct