আপনজন: জল কষ্টে ভুগেই চলেছেন সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষজন। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে দেশ যখন চাঁদে পৌঁছাচ্ছে। ঠিক তখনই পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের লেবুখালি গ্রামে গেলে উঠে আসছে এইরকম ছবি। বসিরহাট থেকে সুন্দরবন যাওয়ার অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার এই লেবুখালী। এখান থেকেই ভান্ডারখালি, হাটগাছা থেকে শুরু করে কালিতলা, হেমনগর ও শামসেরনগর পর্যন্ত একেবারে সুন্দরবন পৌঁছে যান দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। কিন্তু সেই প্রবেশদ্বারেই এখনো চরম অব্যবস্থা রয়েছে। অভাব পরিস্রুত পানীয় জলের। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস বা বাম বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলেও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ভুগছেন পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয় না। দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ লেবুখালী, তিন নম্বর লেবুখালী ও স্বরূপকাটি সহ একাধিক গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা দেখা যায় না। এমনকি যে সমস্ত কল এলাকায় রয়েছে সেই কলগুলি থেকে উঠছে নোনা জল। কলের নোনা জল খেয়ে প্রায়শই আন্ত্রিকের মতো পেটের সমস্যার দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ঘা, পাঁজরা বা চুলকানির মতো চর্মরোগ তো লেগেই থাকে। এমনটাই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ কয়েক কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে তারপরে তাদেরকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হয়। আবার কখনো পানীয় জল কিনেও খেতে হচ্ছে। কখনো ১৫ টাকা কখনো কুড়ি টাকা বা কখনো ৩০ টাকা দিয়ে সেই পানীয় জল তারা বাড়িতে নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সরকারি যে সমস্ত কল গুলি এলাকায় বসানো হয়েছিল সেগুলি একেবারে ভগ্নপ্রায় দশা। বেশিরভাগ নলকূপ থেকে জল ওঠে না। সামনে গ্রীষ্মকাল তাই নতুন করে আবার ভোগান্তির আশঙ্কায় ভুগছে সুন্দরবন এলাকার মানুষ। বিষয়টি নিয়ে দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিধান মুন্ডা বলেন আমরা সরকারি প্রকল্প থেকে গ্রামগুলিতে নতুন করে টিউবওয়েল বসানোর কাজ খুব দ্রুতই শুরু করবো। এই বিষয়ে বিরোধী দলে যুবনেতা পলাশ সরকার বলেন দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন সুন্দরবনের মানুষজন এখনো পানীয় জল পেলেন না। এই সরকার দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। মানুষ তার জবাব আগামী দিনের ভোটের সময় দেবে। বিষয়টি নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শহীদুল্লাহ গাজী বলেন গ্রামবাসীরা যে দাবি করছে তার সাথে আমি কিছুটা হলেও সহমত। এমনিতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়ে অনেক প্রকল্পের কাজই আটকে রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিঙ্গলগঞ্জের কোনায় কোনায় আমরা ভ্যানে ট্যাংকি বসিয়ে জল পাঠিয়ে দিচ্ছি। যে সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে সেগুলি দ্রুত সমাধান করে সেখানে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct