সুব্রত রায় , কলকাতা, আপনজন: কথায় প্রচলিত আছে ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’। মঙ্গলবার বিধানসভার অলিন্দে সেই প্রমাণ দিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি চেয়ারম্যান শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় ডেকে, ১৫ মিনিট ধরে দলীয় শৃঙ্খলার পাঠ দেন হুমায়ুন কবিরকে । সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, দলের শৃঙ্খলা দলে সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন। সকল তৃণমূল বিধায়করা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবেন গত কয়েকদিন ধরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তার বুঝি এবার ইতি ঘটল। কিন্তু না বিধানসভার অলিন্দে হুমায়ুনের সঙ্গে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর মুখোমুখি দেখা হতেই দুজনে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে বৈঠক করে নিলেন।রাজনৈতিক মহল জানে বরাবরই আইএসএফ নেতা ও বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী। সোমবার ফুরফুরা শরীফে তাকে ইফতারে নিমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি সেখানে উপস্থিত হননি। মঙ্গলবার বিধানসভায় একান্তে নওশাদ সিদ্দিকী ও হুমায়ুন কবিরের এই বৈঠক ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়কের দল ছাড়ার জল্পনাকে আরো উস্কে দিল। গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে নাজেহাল করে তুলেছিল ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর রাজ্যের শাসক দলকে। সে যে লিখিত শো - কজের এর জবাব দিয়েছিল সোমবার তা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি তাকে স্বশরীরে মঙ্গলবার বিধানসভায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ তার লিখিত জবাব পেয়ে সন্তুষ্ট ছিল না শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। গত সপ্তাহে ক্যাবিনেট বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরতপুরের বিধায়কের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর আগেও একাধিক বার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ককে দল শোকজ করেছিল। কিন্তু কিছুতেই তিনি মুখে লাগাম দিচ্ছেন না। এক পাতা আর শোকজ লেটারের জবাব দু পাতায় দিলেও দল তার লিখিত জবাবে খুশি না হয়ে মঙ্গলবার তাকে ডেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে শৃঙ্খলা বিষয়টি বোঝান দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক এবং শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে ভরতপুরের বিধায়ক বলেছিলেন তার কাছে দল বড় নয় জাত বড়। হুমায়ুন স্পষ্ট হুমকি দিয়েছিলেন শুভেন্দুকে মুর্শিদাবাদে ঢুকতে দেবো না। জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার চেষ্টা করে ভরপুর থেকে তাকে রানাঘাটের দিকে দড়ি বেঁধে পাঠিয়ে দেবেন। পাল্টা বিজেপি চ্যালেঞ্জ নেয় নিয়ে বলে আগামী ১৩ এপ্রিল শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদ জেলায় তার কর্মসূচি করবে। সেই প্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন এখন কিছু বলবো না ১৩ তারিখ আসুক তারপর দেখা যাবে। এদিকে বিধানসভা ভবনের অভ্যন্তরে হুমায়ুন এবং নওসাদের হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় ও একান্তে বৈঠক ফের উসকে দিল রাজনীতির জল্পনা।যদিও নওশাদ সিদ্দিকী দাবী করেছেন, বিধানসভা ভবনের অভ্যন্তরে আমরা সবাই এক এটাই সৌজন্য আমরা বিধায়ক এটাই বড় পরিচয়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম তৈরি করা হোক। তাতে বিরোধীদলের বিধায়কদের রাখা হোক। দুধকে দুধ এবং পানিতে পানি পরিষ্কার হয়ে যাক। কারা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করছে তা মানুষকে জানাতে হবে। আমাদের বিধায়কদের এই ধরনের ঘটনা রোধে এগিয়ে আসতে হবে। পেছন থেকে এই ধরনের উস্কানি মূলক ঘটনায় ফু দিলে চলবে না দাবি নওশাদ সিদ্দিকীর।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct