আপনজন ডেস্ক: দীর্ঘ ৯ বছর পরে সোমবার ফুরফুরায় এলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকালে এদেশে মুসলিমদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মস্থান হুগলির ফুরফুরা শরীফে পৌঁছান মমতা। সেখানে তার উদ্যোগে নির্মিত মেহমানখানায় ইফতারের আয়োজন হয়েছিল। আমন্ত্রিত ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর এবং পীরজাদারা। মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে ইফতার মজলিশে উপস্থিত পীরজাদারা ফুরফুরা শরীফের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করতে থাকেন। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ইফতার মজলিশ থেকে দাদা হুজুর পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহ.-এর নামে ফুরফুরায় নতুন পলিটেকনিক কলেজ তৈরি এবং ১০০ বেডের হাসপাতালের ঘোষণা দেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ বুঝিয়ে দেন রাজ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে তিনি কোনও আপস করতে রাজি নন। বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায় তাই সম্প্রীতির বার্তা। তিনি বলেন, ‘সকলের হয়ে দোয়া করছি। সম্প্রীতি, শান্তি, ঐক্য বজায় থাকুক। সবাই ভাল থাকুক’। যদিও ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি লগ্নে মুখ্যমন্ত্রীর ফুরফুরায় আগমনকে ভালো চোখে দেখছেন না বিরোধীরা। বিরোধীদের সমালোচনাকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘আগে আমি খুব আসতাম। আকবর আলি খন্দকার আমাকে অনেকবার এনেছে। ১৬ বার এসেছি আমি। ফলে এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। খারাপ লাগে এটাই, আজকে আমি দেখছিলাম কিছু সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, কিছু কিছু টিভি চ্যানেল বলছে, এটা কি ভোটের সমীকরণ? আমি তাদের বলি, আমি যখন কাশী বিশ্বনাথে যাই, এই প্রশ্ন তো করেন না। আমি যখন পুষ্কর যাই, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন খ্রিস্টান নাইট সফরে যাই, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন দুর্গাপুজো করি, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন কালীপুজো করি তখন তো এই প্রশ্ন করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেনে রাখুন, আমি খ্রিস্টানদের উৎসবেও যাই। আমি ঈদ মোবারকেও যাই। আমি ইফতার নিজে করি। রোজাতেও যাই, ইফতারে যাই, ঈদেও যাই। আমি পাঞ্জাবিদের গুরুদ্বারেও যাই, গুজরাটিদের ডান্ডি নাচেও যাই। দোল পূর্ণিমাতেও যাই, মহাবীর জৌনের কাছেও যাই। আমি মনে করি, বাংলার মাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাটি। আমি যেমন দোল হোলির মোবারক জানিয়েছি, তেমন বলেছি রমজান মাসে সকলের রোজা আল্লাহতালা কবুল করুক। আমি সকলের হয়ে দোয়া প্রার্থনা করব। সকলে শান্তিতে থাকুন।’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ফুরফুরায় গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য-সহ সরকারি আধিকারিকরা। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এক জায়গায় হয়েছিলেন ফুরফুরার অনেক পীরজাদা। আমন্ত্রণ পেয়েও হাজির হননি পীরজাদা তথা ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এদিন ত্বহা সিদ্দিকীর নিষেধ সত্ত্বেও সাফেরি সিদ্দিকী দাদা হুজুর পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহ.-এর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানান। পাশাপাশি নির্মীয়মাণ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধনের অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। যদিও দাবি শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকার শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য পলিটেকনিক কলেজ তৈরির কথা জানান। এরপর মেহেরাব সিদ্দিকি, হাসান সিদ্দিকিরা দাবি করেন, পীর আবুবকর সিদ্দিকী রহ.-এর নামে বড় কিছু একটা করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী ফের মাইক্রোফোন হাতে নেন, পলিটেকনিক কলেজটি দাদা হুজুরের নামে তৈরির কথা জানান এবং ফুরফুরা শরীফের ১০০ বেডের হাসপাতালটি দাদা হুজুরের নামে করা হবে বলে জানান। তবে ফুরফুরা শরীফের নির্মীয়মাণ হাসপাতাল চালু করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসি প্রসঙ্গ তোলেন। মমতা বলেন, ওবিসি বিষয়টি কোর্টে আটকে আছে, আমরা চেষ্টা করছি খুব। আমাদের রিক্রুটমেন্ট অনেক বন্ধ আছে সেইজন্য। আমার তৈরি করা লিস্ট থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার নার্সদের আমরা নিয়োগ করতে পারছি না।’ সমস্যা মিটলে উপযুক্ত ডাক্তার নার্স দিয়ে হাসপাতাল চালু করার কথাও জানান এবং ওই হাসপাতালটি পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহ-এর নামে করার ঘোষণা দেন মমতা। বিষয়টি দেখার জন্য ডিএম’কেও নির্দেশ দেন। এরপর নুরুল্লাহ সিদ্দিকী মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই একাধিক অভিযোগ করেন। এমএসকে মাদ্রাসাগুলির দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নজর দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন, ‘পশ্চিমবাংলার এম এস কে মাদ্রাসাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাদ্রাসার নাম মুছে যেতে চলেছে। ১৭ মার্চ আবু বকর সিদ্দিখী রহ.-এর প্রয়াণ দিবসটি সরকারি ছুটি হিসাবে ঘোষণা করারও দাবি ওঠে ইফতার মজলিশ থেকে। ইফতারের সময়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন ইদ্রিস সিদ্দিকী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাসেম সিদ্দিকী।
তথ্য সহায়তা: আবদুস সামাদ মণ্ডল
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct