আপনজন ডেস্ক: ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো লড়তে ভালোবাসেন। আর লড়াই তো এক অর্থে যুদ্ধই। মাঠে তো সেই যুদ্ধ করেনই, যুদ্ধ চলে তাঁর নিজের সঙ্গেও। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায়। সে জন্যও অন্য এক যুদ্ধ করতে হয় রোনাল্ডোকে। শরীরকে ফিট রাখার যুদ্ধ। সেখানেও মজাদার সব খাবার পরিহার করে একদম ঘড়ি ধরে সবকিছু করাও তো আরেক যুদ্ধই!
রোনাল্ডোর জীবনে এই যে যুদ্ধের পর যুদ্ধ, তাতে লাভটা কার হচ্ছে বলুন তো? অবশ্যই রোনাল্ডোর। চল্লিশ বছর বয়সেও গোল করে চলছেন। গতকাল রাতেও যেমন গোল করলেন আল নাসরের হয়ে সৌদি প্রো লিগে। শুধু তা–ই নয়, একই দিনে নেশনস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্ক ম্যাচের জন্য ডাক পেয়েছেন পর্তুগাল জাতীয় দলেও।
দুটি ঘটনার একটিও রোনাল্ডোর ক্যারিয়ারে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়। জাতীয় দলে তো রোনাল্ডো নিয়মিতই খেলছেন, পালন করছেন অধিনায়কের দায়িত্বও। আর গোল? সেটাও এ বয়সেও রোনাল্ডোর কাছে মুড়ি–মুড়কির মতো। আল নাসরের সর্বশেষ তিন ম্যাচেই গোল করলেন। রোনাল্ডো আসলে এসবে সন্তুষ্ট হওয়ার মানুষ নন। জানেন, নিজেকে প্রতিনিয়ত ছাপিয়ে যেতে যা করার মাঠেই করতে হবে, আর তাই মাঠে যত বেশি সম্ভব থাকতে চান। এটাও তাঁর জন্য একরকম যুদ্ধই। যেমন ধরুন, কাল রাতে আল খুলুদের বিপক্ষে আল নাসরের ৩-১ গোলে জয়ের ম্যাচটি। যে ম্যাচ জিতে আল নাসরকে প্রো লিগ পয়েন্ট টেবিলের তিনে তুলে এক্সে রোনাল্ডোর পোস্ট, ‘আরেকটি যুদ্ধজয়। চলো এগিয়ে যাই।’
তবে এই যুদ্ধজয়ে রোনাল্ডো খুশি হলেও সম্ভবত খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সেখানেও অন্য রকম এক যুদ্ধজয়ের সুযোগ না পাওয়াটা কারণ।
ম্যাচে ৪ মিনিটে গোল করা রোনাল্ডোকে ৬০ মিনিটে তুলে নেন আল নাসরের ইতালিয়ান কোচ স্তেফান পিওলি। সিদ্ধান্তটি রোনাল্ডো মেনে নিতে পারেননি। কারণটা সহজেই অনুমেয়, ৯০ মিনিটের এ ‘যুদ্ধে’ পুরো সময় মাঠে থেকে আরও গোল পেতে চেয়েছিলেন। নিজের সঙ্গে তাঁর যে চলমান যুদ্ধের কথা বলা হয়েছিল, এটা তারই অংশ। কে জানে, আরও বেশি সময় মাঠে থাকলে হয়তো আরও গোল পেতেও পারতেন! তখন সহস্র গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার পথে আরেকটু এগিয়ে যেতে পারতেন। যদিও খুব একটা পিছিয়েও নেই। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৯২৮ গোল হয়ে গেছে রোনাল্ডোর। ১০০০ গোলের জগতে পা রাখতে চাই আর ৭২ গোল।
রোনাল্ডো পুরো সময় খেলার যোগ না পাওয়ায় মাঠ ছাড়ার সময় শরীরী ভাষায় অসন্তুষ্টিটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। টাচলাইন পেরিয়ে কোচকে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে রোনাল্ডো আর ডাগআউটে বসেননি। টানেল দিয়ে সরাসরি চলে যান ড্রেসিংরুমে।
অবশ্য কোচ পিওলিই–বা কী করবেন, তাঁর ডিফেন্ডার নাওয়াফ বোশাল ৫৬ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় ১০ জনে পরিণত হয় আল নাসর। ততক্ষণে পিওলির দল ৩-০ গোলে এগিয়ে।
অতিরিক্ত ঝুঁকি না নিতে আক্রমণভাগ থেকে রোনাল্ডোকে তুলে তিনি উইঙ্গার আইমান ইয়াহায়াকে মাঠে নামান। শুধু গোল করা নয়, একজন খেলোয়াড় কমে যাওয়ায় পিওলিকে তো গোল ঠেকানো নিয়েও ভাবতে হবে। আইমান উইঙ্গার হলেও দুটো কাজেই বেশ ভালো।
আল নাসরের হয়ে রোনালদোর পর গোল করেছেন সাদিও মানে ও জন ডুরান। আল খুলুদের ৭২ মিনিটের গোলও অবশ্য আল নাসরেরই, আলি লাজামির আত্মঘাতী গোল!
তবে পিওলির রোনাল্ডোকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি পর্তুগিজ তারকার সমর্থকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। এক্সে এক সমর্থক লেখেন, ‘রোনাল্ডো ১০০০ গোলের দেখা পান, পিওলি তা চান না।’
আরেক সমর্থকের প্রতিক্রিয়া,‘নিজের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝামেলা বাধাতে হয় না, কারণ, তাতে কোচদের শেষটা ভালো হয় না।’
রোনাল্ডো মাঠ ছাড়ার সময় অসন্তুষ্ট ছিলেন ঠিকই, তবে ডাগআউটে না বসে টানেল দিয়ে সরাসরি ড্রেসিংরুমে চলে যাওয়া ছাড়া প্রকাশ্যে সেভাবে আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। ততক্ষণে কি তাঁর কানে পর্তুগাল জাতীয় দলে থাকার খবরটি পৌঁছে গিয়েছিল? ঠিক জানা যায়নি। তবে ২০ ও ২৩ মার্চ নেশনস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য ঘোষণা করা দলে থাকায় রোনাল্ডো নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। ম্যাচ দুটিতে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct