২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তার আগে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণ করার আগাম প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। সেই বিতর্ক উসকে দিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য। তিনি এখন নিয়মিত মুসলিম বিদ্বেষকেই হাতিয়ার করছেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার লক্ষ্যে। দিন কয়েক আগে শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের যে কজন মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে, তাদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেব। এই মন্তব্য ঘিরে শুভেন্দু অধিকারীর সমালোচনায় মুখর রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে সংখ্যালঘু মহল। শুভেন্দুর এই বিদ্বেষ মন্তব্য প্রসঙ্গে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজ্যের বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়করা। ‘আপনজন’কে তাঁরা অকপটে কি জানালেন তা তুলে ধরেছেন আপনজন সাংবাদিক এম মেহেদী সানি। আজ প্রথম কিস্তি।
নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যে কেউ জয়লাভ করতে পারে, মুসলিম তো পরের কথা। আর তাদেরকে চ্যাংদোলা করে বের করে দেবে! তাহলে কি নির্বাচন কমিশনকে তারা নস্যাৎ করছে না? দ্বিতীয়ত, ভারতের সংবিধান কি বলে যে বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে ফেলে দিতে হবে? মুসলিম জাতিকে এইভাবে অবমাননা করবে! এই অধিকার কে তাকে দিয়েছে। বিরোধী নেতা হওয়ার যোগ্যতা তার নেই। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং জানাচ্ছি। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, বিধায়ক, মন্তেশ্বর
শুভেন্দু অধিকারীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে পারবে না। ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ভাষা ঠিক নেই। ফজল করিম মিয়া, প্রাক্তন বিধায়ক, তুফানগঞ্জ
উনি মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, যে কারণে অবান্তর কথাবার্তা বলছেন। কোন জাতি কিংবা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি হয় মানুষকে নিয়ে, মানুষের কল্যাণে, এলাকার উন্নয়নে। কিন্তু উনি জাত পাত নিয়ে রাজনীতি করছেন, বিজেপি পার্টিতে টিআরপি পেতে এবং দিল্লিতে যে সমস্ত শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বরা রয়েছেন তাদের কাছে ভালো হওয়ার জন্য এই সমস্ত কুমন্তব্য করছেন। মিনহাজুল আরফিন আজাদ, বিধায়ক, চাকুলিয়া
উনি একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা করছেন। রাজ্যে একটি দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা লুটবার চেষ্টা করছেন। মুসলিমরা ওই ফাঁদে পা দেবেন না, মুসলিম বিধায়করাও পা দেবেন না। ওই চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণই যোগ্য জবাব দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বলে এখানে সর্ব ধর্মের মানুষজন মাথা উঁচু করে সসম্মানে বসবাস করছে। আব্দুল রহিম বক্সি, বিধায়ক, মালতীপুর
জনগণ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুবাবুর মন্তব্যের জবাব দেবেন। আর পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়, চিংড়ি মাছ বেশি লাফায়। তাতে কোনও লাভ হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিভেদ নিয়ে রাজনীতি করেন না, বিপদে সমস্ত মানুষকে নিয়ে কাজ করেন।আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে নিয়ে কাজ করছি, কে কি বলল তাতে কান দেই না। ইমানি বিশ্বাস, বিধায়ক, সুতি
এখন দিনদিন যেটা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য উসকে দেওয়া হচ্ছে, এগুলো খুবই খারাপ জিনিস। আমরা আজ কত দূরে এগিয়েছি সেটাই ভাবছি। শুভেন্দু অধিকারী যদি মুসলিম হতেন আর অন্য কেউ যদি এভাবে বলতেন তাহলে কেমন লাগতো? আসলে সব থেকে বড় পরিচয় আমরা মানুষ। তাহলে শ্রেণি বিন্যাস কেন? আব্দুর রাজ্জাক, বিধায়ক, জলঙ্গি
এই ধরনের মন্তব্য করা ঠিক নয় একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আছেন তিনি। বাংলা বলুন, ভারতবর্ষ বলুন, যাই বলুন না কেন আমরা সম্প্রীতির উপর আছি। সুতরাং কারও কোনো কথাবার্তা বলতে গেলে সেই সম্প্রীতি, সৌজন্যতা রেখে কথা বলা উচিত। রফিকুল ইসলাম বিধায়ক, বসিরহাট উত্তর
শুভেন্দু অধিকারী আগে তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন। লোভের জন্য পরবর্তীতে বিজেপিতে গেছেন। শুভেন্দু অধিকারীর এত ক্ষমতা নেই। মুসলিম বিধায়কদের উপর আল্লাহর রহমত আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ আছে। বিজেপি বিধায়করা দল ছেড়ে দিচ্ছে। শুভেন্দু আবোল তাবোল কথা বলে থাকেন বিধানসভার মধ্যে কোনো নিয়ম কানুন মানেন না। কথায় কথায় কাগজপত্র ছেড়ে। সুতরাং উনি কি বললেন না বললেন তার গুরুত্ব নেই। আব্দুল খালেক মোল্লা, বিধায়ক, মেটিয়াবুরুজ
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct