আপনজন ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশে ফের শোকজের মুখে পড়লেন মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে ধরনের ভাষা প্রয়োগ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার নির্দেশে তৃণমূলের পরিষদীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি ভরতপুরের বিধায়ককে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না পেলে দল হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ আগামী দিন গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য প্রবীণ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকেও মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ভরতপুরের বিধায়কের কাছে শোকজ লেটার পৌঁছে গেছে। তাকে জবাব দেওয়ার জন্য শুধু দোলের দিন সময় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শনিবার তাকে তার এই শোকজ লেটারের জবাব দিতে হবে দলকে। যদি তার জবাব সন্তোষজনক না হয় তাহলে তাকে সাসপেন্ড করা হতে পারে বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই মুহূর্তে বিধানসভার অধিবেশন থেকে বহিষ্কৃত। সেই ঘটনার বিরোধিতা করে বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু নেতৃত্বে গত কয়েকদিন ধরে বিজেপি বিধায়করা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছেন তাকে জোর করে বিধানসভা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হুমকি দিয়েছিলেন আগামী বিধানসভা থেকে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে বাইরে ফেলা হবে। শুভেন্দুর সেই মন্তব্যের পরেই বিতর্ক শুরু হয়। রাজ্যের বিরোধী দল নেতাকে আক্রমণ করে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সুর চড়ান। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তিনি গত বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাল্টা হুমকি দিয়ে বিতর্কের মুখে দাঁড় করান তৃণমূল দলকে। বৃহস্পতিবার ভরতপুরে বিধায়ককেও বলতে শোনা যায় তার কাছে জাতি দলের চেয়ে বড়। এইসব মন্তব্য নিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়কে অবিলম্বে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে ক্যাবিনেট বৈঠকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। একজন প্রবীন নেতা হয়ে যেসব মন্তব্য করেছে তা তাকে শোভা পায় না বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে অভিমত প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর। এই ধরনের মন্তব্য মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে না করতে বলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে এর আগেও একাধিকবার মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের হুমায়ুন কবীর বিতর্কিত মন্তব্য করে শোকজ হয়েছিলেন। সে এর আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভাইপোকে রাজা বানাতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার জন্য দল তাকে বেশ কিছুদিন নিলাম্বিত করেছিল। সেই সময় সে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরেছিল। পরে বিজেপি ঘুরে আবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল। এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করতে হবে বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেছিল। সেই সময় তাকে দলের রাজ্য সভাপতি করেছিল। পরে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়ে সেই ঘটনায় নিস্তার পেয়েছিল ভরতপুরের বিধায়ক। তবে পরপর তিনবার কাউকে শোকজ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত এই ক্ষেত্রে কার্যকর হয় কিনা তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই। যদিও দলের অন্দরমহল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যেভাবে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাতে হুমায়ুনের জবাব এবার সন্তোষজনক না হলে ভরতপুরের বিধায়কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তৃণমূলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মন্তব্য করেন দুপক্ষ মিলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। শুক্রবার দোল রমজান মাসে জুম্মার নামাজ রয়েছে আর এইসব বলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হচ্ছে। মোহাম্মদ সেলিম শুভেন্দু এবং হুমায়ুনের বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক ভাষণের অভিযোগ দায়ের করার জন্য রাজ্যের থানায় থানায় পরবর্তী কর্মসূচি সিপিএম নিচ্ছে বলে ঘোষণা করেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct