এম মেহেদী সানি , কলকাতা, আপনজন: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের নেতৃত্বে দিল্লির যন্তরমন্তরে ১৩ মার্চ যে প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে, সেই আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংগঠনগুলো সোমবার কলকাতা ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্না-বিক্ষোভ পালন করলো । কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মনোভাব তুলে ধরে প্রতিবাদের পাশাপাশি পার্লামেন্টে ওয়াকফ সংশোধনী বিল যাতে কেন্দ্রীয় সরকার পাশ করাতে না পারে সেজন্য সকল বিজেপি বিরোধী সাংসদদের ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানালেন আন্দোলনকারীরা ৷
এ দিন ধর্না-বিক্ষোভের মাঝে আন্দোলনকারীদের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে গিয়ে ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন ৷ ওই স্মারকলিপির মাধ্যমে মুসলিম সংগঠনগুলো কার্যত হুঁশিয়ারি দেন ‘ওয়াকফ একটি ধর্মীয় বিষয় তাই ওয়াকফ সংশোধনী বিল বা আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত মুসলমানরা যতদিন প্রয়োজন ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে । এই বিতর্কিত বিল আমরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেব না । যদি বছরের পর বছর ধরে প্রতিবাদের প্রয়োজন হয়, মুসলমানরা এর জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এই বিলটি গ্রহণ করবে না ।’
মুসলিম সংগঠনগুলোর মতে, যেভাবে ওয়াকফ বিলের খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং সংসদে পেশ করার দিকে এগোচ্ছে তাতে সারাদেশের মুসলমানরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ এবং হতাশায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের সংবিধানসিদ্ধ অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত, যা মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকারকে সরাসরি আঘাত করছে। এদিন মুসলিম সংগঠনগুলির তরফে সংসদে বিরোধী সাংসদদের কাছে ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনা বা পেশ করার সময় ওয়াকআউট না করার আর্জি জানান।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মাওলানা আবু তালিব রহমানী থেকে শুরু করে ল বোর্ড সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, হাজী মাহমুদ আলম, সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম, জমিয়তে উলামার ক্বারী শাসসুদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর ড. মসিহুর রহমান, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীদের সাথে হিন্দু সন্ন্যাসী ভার্গভ আচার্য, বন্দি মুক্তি কমিটির ছোটন দাস, ভানু সরকার, মানিক ফকিররাও ধর্ণা মঞ্চ থেকে তেজস্বী বক্তব্যের মাধ্যমে ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবি জানান ৷ ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা শুধু মুখে করলে হবে না, সংসদেও করতে হবে বলে স্পষ্ট জানান বক্তারা ৷
তৃণমূল, টিডিপি, জেডিইউ সহ সকল বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সংসদদের উদ্দেশ্যে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কড়া বার্তা দেন তাঁরা ৷
সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম তার বক্তব্যে ওয়াকফ বিল কি ও কেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেন ৷ এই বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে বলে অভিযোগ সেলিমের ৷
এ দিন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ওয়াকফ বিলের খসড়ায় কি কি জটিলতা রয়েছে এবং ওয়াকফ সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় ভাবাবেগের পরিপন্থী বিষয়গুলিকে তুলে ধরে সচেতন করেন। বক্তব্য রাখেন জামায়াত ইসলামি হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমানও।
এদিন ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় নানা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড ৷ ওই সব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ওয়াকফ বিল সংবিধানের ধারার ১৫, ২৫ ও ২৬ ধারার বিরোধী, এই বিল মানছি না’, আবার কোনটাতে লিখেছিল, ‘ওয়াকফ্ আল্লাহ্র সম্পত্তি, মুসলিমরা শুধুমাত্র তার আমানতদার ’ প্রভৃতি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct