আপনজন ডেস্ক: ইসরায়েল ও হামাসের বন্দি বিনিময় চুক্তি ৫০ দিন পার হলেও এখনো সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। বন্দিদের পরিবার ও আন্দোলনকারীদের দাবি, ইসরায়েল সরকার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে। এই পরিস্থিতিতে, বন্দি সেনা নিমরোদ কোহেনের ভাই ইয়োতাম কোহেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছেন।
শনিবার (৯ মার্চ) তেল আবিবের কিরিয়া সামরিক সদর দপ্তরের বাইরে হাজারো মানুষের বিক্ষোভে তিনি এই কথা বলেন।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে নিমরোদ কোহেনসহ আরও কয়েকজন বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে, এই ধাপে ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, যা নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী রাজনৈতিক অংশীদাররা মানতে রাজি নয়। ইয়োতাম কোহেন জানান, “আমরা চুক্তির ৫০তম দিনে আছি, অথচ ইসরায়েল এখনো শর্ত মানেনি।” তিনি সামরিক হামলা চালিয়ে চুক্তির শর্ত এড়ানোর প্রচেষ্টা নিন্দা করেন এবং বলেন, “এই একই সামরিক চাপের কারণে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি বন্দি নিহত হয়েছে, অর্থাৎ প্রতি ছয়জন বন্দির মধ্যে একজন মারা গেছে।”
তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে এসব দাবি করেন। কোহেন আরও অভিযোগ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে বেশিরভাগ বন্দি ইতোমধ্যেই মারা গেছেন, তাই নতুন করে আলোচনার দরকার নেই। তবে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে চায়। আটজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও প্রভাবশালী ইসরায়েলি-আমেরিকান ধনকুবের মিরিয়াম অ্যাডেলসন, যিনি রিপাবলিকান দলের বড় দাতা এবং যাকে ট্রাম্পের নীতিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য দায়ী করা হয়।
তেল আবিবের বিক্ষোভে ইয়িফাত কালদেরন, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি ওফের কালদেরনের স্বজন ঘোষণা দেন যে, বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা সামরিক সদর দপ্তরের বাইরে সারা রাত অবস্থান করবে। এই বিক্ষোভকে “অপারেশন কিরিয়া কর্ডন” নাম দেওয়া হয়েছে, যেখানে আন্দোলনকারীরা সামরিক ঘাঁটির প্রতিটি গেটের সামনে অবস্থান নেবে।
আয়োজকরা আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ জানান।
এই বিক্ষোভ ইসরায়েলের ভেতরে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিফলন। বন্দিদের পরিবারের দাবি, নেতানিয়াহু ও তার সরকার বন্দি বিনিময় চুক্তিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং তাদের স্বজনদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা সরকারের চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না। বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না ইসরায়েল সরকার চুক্তির শর্ত পূরণ করে। এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct