আপনজন: আহলে হাদিস, সুন্নি, লা-মাজহাবী, বেরেলি, দেওবন্দ সকলকে কলেমা সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানালেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার দরকার।’ এ সময় তিনি বলেন ‘আমার হয়তো কোরআন হাদিসের অত জ্ঞান নেই তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি কেবলমাত্র আল্লাহতালার উপর ভরসা করি, তাহলে পৃথিবীতে কোনো শক্তি নেই আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারে।’ ঈদ পরবর্তী ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাবেশের প্রস্তুতি সভায় এসে এমনটাই মন্তব্য করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
ঈদের পর কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাবেশ। সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিপেক্ষিতে কলকাতা টাউন হল এ সারা রাজ্যের ইমাম প্রতিনিধিদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শনিবার সভা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, অল-ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মাও: মো: বাকিবিল্লাহ মোল্যা ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাবেশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন, সেই পরিপেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ৭ই এপ্রিলে সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক ইমাম সাহেবদের মতে ৭ই এপ্রিল ঈদের কাছাকাছি হওয়ায় আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নতুন তারিখ নির্ধারণ করার চেষ্টা করবো।’ বক্তব্যের শুরুতেই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সমাজে ইমাম সাহেবদের ভূমিকা তুলে ধরে দীর্ঘস্হায়ী পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘ইমামরাই পরকালের সুখের জন্য পথ দেখাচ্ছেন। আমি মনে করি আমার থেকে ইমামদের সম্মান অনেক বেশি।’
শুধু ভারত বর্ষ নয়, পৃথিবীর সব জায়গায় মুসলিমরা আজ সংকটে। সে কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, কারণ আমরা ঈমানকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে আমরা অত্যাচারিত। আমি যখন মুসলিমদের নিয়ে বলতে যাই তখন আমি হয়ে যাই সাম্প্রদায়িক। আমি চাই সমস্ত জাতির সাথে সাথে মুসলিম জাতির উন্নয়ন হোক, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক, আইএস-আইপিএস হোক।
এ দিন ফিরহাদ হাকিম একদিকে যেমন সংখ্যালঘুদের উত্তরণে অনুপ্রাণিত করেন। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে তা রাজ্য সরকার কিভাবে দমন করেছে সে কথা বলেন। ফিরহাদ বলেন, বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধর্ম আমাদের বুকের মধ্যে থাকবে কিন্তু সমাজে আমরা একসঙ্গে থাকবো।’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ‘বাংলায় যারা সাম্প্রদায়িকতা ছড়াবে তাদের ছাড় নেই।’ কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেও তিনি কাড়া সমালোচনা করেন। বলেন, এতদিন সাম্প্রদায়িকতা কেবল গুন্ডাদের মধ্যে ছিল, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচ্ছন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে মদদ দিচ্ছে।’ ওবিসি প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন ফিরহাদ হাকিম। ‘আমরা এটা ছাড়বো না’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন। বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের উন্নয়ন চান। একটা সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে রাজ্যের তথা দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ ওয়াকফ ইস্যু সহ কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাবকে সমালোচনা করে দেশ প্রেমের কথা তুলে ধরে ফিরহাদ হাকিমের সাফ কথা, ‘এই দেশের মাটিতেই আমার কবর হবে৷’ একই সুরে সুর মিলিয়ে বক্তব্য রাখেন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। ইমামদের একাধিক দাবি-দাওয়া নিয়েও বক্তব্য রাখতে শোনা যায় বিভিন্ন ইমাম প্রতিনিধিদের। ঈদ পরবর্তী সমাবেশ সফল করতে বক্তব্য রাখেন নাখোদা মসজিদের ইমাম সফিক কাসেমী, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান, বিধায়ক রফিকুল ইসলাম, ইমাম প্রতিনিধি নিজামুদ্দিন বিশ্বাস, ড. বসির আহমেদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ প্রমুখ। সমগ্র সভাটি পরিচালনা করেন অল-ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মাওলানা মো: বাকিবিল্লাহ মোল্যা। সভা পরবর্তীতে সকলেই ইফতার মজলিসে শামিল হন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশ ইমাম সাহেবরা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct