এম মেহেদী সানি ও আলম সেখ, কলকাতা, আপনজন: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় কলকাতার মুসলিম সংগঠনগুলো আগামী ১০ মার্চ ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্না মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার কলকাতার ইরফান লাইব্রেরিতে যৌথভাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা জানান, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের নেতৃত্বে দিল্লির যন্তরমন্তরে ১৩ মার্চ যে প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে, তার প্রতি সংহতি জানিয়ে কলকাতাতেও একইসঙ্গে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মুসলিম সংগঠনগুলোর মতে, কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের সংবিধানসিদ্ধ অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, ওয়াকফসংশোধনী বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত, যা মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকারকে সরাসরি আঘাত করছে। এদিন মুসলিম সংগঠনগুলির তরফে সংসদে বিরোধী সাংসদদের কাছে সংসদে ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনা বা পেশ করার সময় ওয়াকআউট না করার আর্জি জানান এদিন উপস্থিত মুসলিম সংগঠনগুলির নেতারা।
এদিন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবু তালিব রহমানি বলেন, সংসদে বিরোধী দলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সরকার বিলটি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে প্রায় পাঁচ কোটি মুসলমানের মতামত জমা দেওয়া হলেও, তা উপেক্ষা করা হয়েছে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনগত ও বাস্তবসম্মত আপত্তি জানানো হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আলোচনা না করেই এটি পাস করানোর চেষ্টা করছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের স্বার্থে আঘাত হানতে চায়। ওয়াকফ সম্পত্তির বিশেষ আইনগত অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, অথচ অন্যান্য ধর্মীয় ট্রাস্ট ও বোর্ডগুলোর ক্ষেত্রে একইরকম বিধান বহাল রাখা হয়েছে। এটি সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওয়াকফ সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের নিজস্ব সম্পত্তি, তা রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার সাংসদদের এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদদের ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনা বয়কট না করতে বলুন। তাদের সংসদে থাকা উচিত এবং বিতর্কে অংশ নেওয়া, বিরোধিতা করা, তর্ক করা এবং সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর শোনানো উচিত।
পরিশেষে আগামী ১০ মার্চ সংসদে অধিবেশন শুরুর দিন দুপুর ১২ টা থেকে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে অনুষ্ঠিত ধর্না মঞ্চে বিভিন্ন দল, সংগঠন নির্বিশেষে প্রত্যেকে সামিল হয়ে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আহবান করেন তিনি।
জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হলেও তারা বিজেপিরই প্রতিনিধিত্ব করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার স্বৈরাচারী নীতি অনুসরণ করে কৃষি আইনের মতোই এটি চাপিয়ে দিয়ে মুসলিমদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চায়।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিজেপির এই স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে শুধু মুসলিম নয়, সকল ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরি।
এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দের সাধারণ সম্পাদক ক্বারী শামসুদ্দিন আহমেদ কাসেমী, অল ইন্ডিয়া তাবলীগ-ই-সিরাতের মহাসচিব মাওলানা মুজাহিদ হুসাইন হাবিবি, রাজ্যের আহলে হাদিসের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা মারুফ সালাফি, পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য হাজী মাহমুদ আলম প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct