নাজমুস সাহাদাত , ফারাক্কা, আপনজন: বুধবার থেকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে নবদ্বীপ ধাম বালুরঘাট এক্সপ্রেস কামরার একটি ভিডিও। যেখানে দেখা গেছে একজন বয়স্ক যাত্রী ট্রেনে সফর করছিলেন। তার পকেটে ছিল আধুনিক মডেলের স্মার্টফোন, আর তাতেই ঘটল বিপদ। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে একজন মহিলা বরাবর সেই প্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রীর গালে চড় থাপ্পড় দিয়ে চলেছেন। ওই মহিলার অভিযোগ, ওই যাত্রী নাকি তার ভিডিও করছিলেন। তবে এখনও রেকর্ড করা সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ট্রেনের আর এক যাত্রী মারধরের সম্পূর্ণ ঘটনা ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায় এবং ভিডিও ভাইরাল হতে না হতেই নিন্দার ঝড় উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহু বিদ্বজ্জন সামাজিক মাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন, যদি ব্যক্তিটির অনিচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও রেকর্ড হয়েও যায় তবু ওইভাবে একজন কম বয়সি মেয়ে পিতৃতুল্যকে গালিগালাজ দেওয়া এবং বহুবার তার গালে চড় থাপ্পড় মারা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। জানা গেছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার তোফাপুর গ্রামে। নাম মাফিকুল ইসলাম ওরফে (কালু)। তিনি মালদা জেলায় বিশেষ কর্ম সূত্রে অর্থাৎ আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির জন্যে ধুলিয়ান স্টেশন থেকে মালদার পথে যাচ্ছিলেন এবং ফরাক্কার পর থেকে শুরু হয় এই ঘটনা। তার সাথে আরও ১০-১২ জন সঙ্গী সাথীরা ছিলেন তবে তিনি একাই অন্য কামেরায় ছিলেন। ভিডিও ছড়াতেই তোলপাড় সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজ্য রাজনীতিতেও।
নিগৃহীত যাত্রী মাফিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মোবাইল সম্বন্ধে আমার কোন অভিজ্ঞতাই নেই। ওই তরুণী ফোনে কারও সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ আমাকে কি করছেন কি করছেন বলে মোবাইলটা কেড়ে নিলেন। তখন আমার মোবাইলটা নিয়ে আছাড় মেরে দিলেন। তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে বলুন। তিনি বলতে লাগলেন ভিডিও করছো, ভিডিও। তারপর শুরু করে প্রচুর গালিগালাজ ও মারধর। গালে লাগাতার থাপ্পড় মারতে থাকেন। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। ট্রেনের জিআরপিকে ফোন করে ডাকলেন। তারা আসলেন এবং আমাকে ও তাকেসহ নিয়ে গেলেন জিআরপির আধিকারিকরা। ওই মহিলাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং তাদেরও কোন কথা শোনেননি। আমি ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়েছি এবং আমার সাথে যা ঘটেছে তার জন্যে অপমানিত বোধ করছি। আমার একটাই বলার আমার মুখে দাড়ি ছিল বলেই সমস্যা!
মাফিকুলের এক কাজের সঙ্গী চন্দারাণী দাস বলেন, আমরা পাশের কামরায় ছিলাম। এসে দেখলাম হতভম্ব একটা বাবার বয়সি লোককে মারছে ট্রেনে থাকা কেউই তার প্রতিবাদ করেননি। তবে মেয়েটারই দোষ ছিল। কিভাবে কখন ফোনের ক্যামেরা চালু হয়ে যায় সেটা ওই বয়স্ক ব্যক্তি বুঝতে পারেনি। বহুক্ষণ ভিডিও হয়েছে তার মধ্যে ওই মহিলার মুখ ভিডিওতে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র ট্রেনের কামরা ও তার হাতের কিছু অংশ ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে। এমনকী কি ওই মেয়ের বাবাও নিষেধ করছিলেন। কিন্তু তার মেয়ে কিছুই শোনেননি। আমরা একইসাথে কাজ করি, উনি খুব ভালো মানুষ। ফোন সম্পর্কে এতকিছু জানে না বলেই এই ঘটনা। হিন্দু-মুসলিম নয় দোষ ওই মেয়েটার দেখেছি, তাই তারই দোষ, সে যে ধর্মেরই হোক।
রাজ্যের তাবড় রাজনৈতিক নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের ফেসবুক পেজে ট্রেনের ঘটনার ভিডিও সমেত ওই মেয়েটির চড় থাপ্পড় মারাকে সমর্থন করে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তার এই পোস্ট মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিগৃহীত মাফিকুল ইসলামের সঙ্গী চিন্ময় বলেন, এই ঘটনা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম করে একটা বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এটা করা একদম আপনার উচিত হয়নি। মাফিকুলের সাথে আমরা তিন মাস ধরে একসঙ্গে কোম্পানির কাজ করছি তো তার বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ আমরা শুনতে পাইনি।
ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানান, আমি গতকাল তার বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছিলাম। আমার বিশ্বাস যে ভদ্রলোকটির বিরুদ্ধে মহিলাটি অভিযোগ করেছেন যে বয়স্ক লোকটি তার ফটো বা ভিডিও তুলেছেন। একজন বয়স্ক মানুষ এইধরনের কাজ করবেন বলে মনে হচ্ছে না। এই ঘটনায় দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রের সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানান, যদি ওই মেয়েটি মনে করেন যে তার কোনও অশ্লীল ভিডিও বা ছবি অন্য ব্যক্তিটির ফোনে রয়েছে তাহলে তার জন্যে সাইবার ক্রাইম বিভাগ রয়েছে। সেখানে তিনি অভিযোগ করতে পারেন। তরুণী যেভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবির।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct