আপনজন ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্য দেশগুলো একটি জোট গড়ার উদ্যোগ জোরদার করবে এবং ইউক্রেনের প্রতি তাদের এই সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়ার হাত থেকে ইউক্রেনকে রক্ষায় চার দফা কর্মপরিকল্পনাও তিনি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ‘কোয়ালিশন অফ উইলিং’ হিসেবে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করবে এবং ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত করার চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান। ‘আমরা আজ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আছি’ ১৮ জন নেতার শীর্ষ সম্মেলনের পর স্টারমার এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘যাদের বেশিরভাগই ইউরোপ থেকে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি তখন বলেন, কিয়েভ ‘জোরালো সমর্থন’ অনুভব করেছে। তিনি আরো বলেন, শীর্ষ সম্মেলন ‘অত্যন্ত উচ্চ স্তরে ইউরোপীয় ঐক্য প্রদর্শন করেছে যা দীর্ঘদিন ধরে দেখা যায়নি। হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনীয় নেতা এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তীব্র বিতর্কের দুই দিন পর এই সম্মেলন হয়। জেলেনস্কি শীর্ষ সম্মেলনের পর বলেন, ‘আমরা সবাই ইউরোপে একসঙ্গে কাজ করছি যাতে সত্যিকারের শান্তি এবং নিশ্চিত নিরাপত্তার জন্য আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তি খুঁজে বের করা যায়।’
এদিকে, ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখোঁ লে ফিগারো সংবাদপত্রকে বলেছেন, প্যারিস, লন্ডন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আকাশে, সমুদ্রে এবং জ্বালানি অবকাঠামোতে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করতে চায়। নেতাদের বৈঠকের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার বলেন চারটি দফায় একমত হয়েছে। কিয়ার স্টারমার একই সঙ্গে পাঁচ হাজার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তার কথাও ঘোষণা করেন। এর আগে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ডের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা এমন একটি দুর্বল চুক্তি মেনে নিতে পারি না, যা রাশিয়া সহজেই লঙ্ঘন করতে পারে। বরং যেকোনো চুক্তির সমর্থন অবশ্যই শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনের সুরক্ষায় প্রস্তাবিত জোট বা ‘কোয়ালিশন অফ উইলিং’- যোগ দিতে কোন কোন দেশ সম্মত হয়েছে তা তিনি জানাননি।
তবে তিনি বলেছেন, যারা অঙ্গীকার করেছেন তারা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করবেন। যুক্তরাজ্য তার অঙ্গীকার রক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ‘মাটিতে বুট এবং আকাশে বিমান’ দিয়ে তার প্রতিশ্রুতি সমর্থন করবে। তিনি আরো বলেন, ‘ইউরোপকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। চুক্তির জন্য মার্কিন সমর্থন প্রয়োজন হবে এবং রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তবে মস্কোকে শর্তাবলী নির্ধারণ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
স্যার কেয়ার বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, টেকসই শান্তির জরুরি প্রয়োজনে আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র কি অবিশ্বস্ত মিত্র ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার কী ঘটেছিল তা কেউ দেখতে চায়নি, কিন্তু আমি স্বীকার করি না যে যুক্তরাষ্ট্র একটি অবিশ্বস্ত মিত্র।’
সম্মেলনে যেসব দেশ যোগ দিয়েছে তারা হলো— ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও কানাডা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেছেন, ইউরোপকে পুনরায় অস্ত্রে সজ্জিত করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। একই ধরনের মত দিয়েছেন সামরিক জোট ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে।
তিনি বলেছেন, বৈঠকে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের যত দিন দরকার তত দিন লড়াই অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অগ্রসর হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
সম্মেলনের পর ভলোদিমির জেলেনস্কি রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে সাক্ষাত করতে যান। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত রয়েছেন। যদিও এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, রাশিয়ার সাথে শান্তিচুক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেনের খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct