আপনজন: মানুষের প্রয়োজনে বিজ্ঞান কতটা কাজে আসছে, সেটাই দেখা দরকার— জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে অনুসন্ধানের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানীদের আহ্বান
২৮ শে ফেব্রুয়ারি ছিল জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সিভি রামন-এর সুদূরপ্রসারী আবিষ্কার ‘রামন এফেক্ট’-এর স্মরণে দিনটি সারা দেশে পালিত হয়ে থাকে। অনুসন্ধান সোসাইটি আয়োজন করেছিল অনলাইনে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশ নিয়েছিল গোটা রাজ্যের ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা। বিষয় ছিল–মোবাইল ফোন–শিশুর মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশের অন্তরায়, স্কুল প্রাঙ্গণে বিজ্ঞান, তোমার দেহেও বিজ্ঞান উপস্থিত এবং বইয়ের পড়াশোনা যদি দেখানো যায় হাতে-কলমে–কেমন হয়। এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা নিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায় তাদের মধ্যে। তাদের লেখা প্রতিটি প্রবন্ধ ছিল অত্যন্ত চিন্তা-ভাবনা প্রসূত ও বেশ আকর্ষণীয় বলে জানিয়েছেন প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিচারক মন্ডলী। উল্লেখ্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাজ্যব্যাপী এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিচার কার্যের দায়িত্বভার নিয়েছিলেন।
জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে ওই সমস্ত প্রবন্ধ যে ছাত্র-ছাত্রীরা লিখেছিল তাদের মধ্যে নির্বাচিতদের পাঠ এদিন শোনা হয়। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রীরা হল হুগলি দ্বারহাটা রাজেশ্বরী ইনস্টিটিউশন এর নবম শ্রেণির ছাত্র সৌহার্দ ঘোষ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আলমপুর শিক্ষা নিকেতন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আয়াত পারভীন এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রিয়াংসু দে। বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ পুরস্কার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রতিযোগিতার বিশেষ গুণমান সম্পন্ন প্রবন্ধ গুলি নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন অনুসন্ধান সোসাইটির সহ-সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম গাজী।
এছাড়াও এদিন বিজ্ঞান দিবসের অনুষ্ঠানে অনুসন্ধান সোসাইটি অনলাইনে এক বিশেষ আলাপচারিতার ব্যবস্থা করে। আলাপচারিতায় অংশ নেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক অশোক কান্তি সান্যাল, অধ্যাপক বাসব চৌধুরী, ডঃ মানস প্রতিম দাস এবং অধ্যাপক মতিয়ার রহমান খান।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের কথায় বারে বারে যে সমস্ত কথা গুলি উঠে আসে তা হল বিজ্ঞান হওয়া উচিত মানুষের প্রয়োজনে। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, বীরেশ গুহ, দিলীপ মহানবিশ, সি ভি রামন সহ আরো অনেক বিজ্ঞানীর জাতির তথা মানুষের সেবায় তাঁদের বিরাট অবদানের কথা উঠে আসে।
ছাত্র ছাত্রীসহ সকলের জন্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় ভারতের সংবিধানে আমাদের মৌলিক দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। ৫১ এ এইচ ধারায় বিজ্ঞান মেজাজ, মানবতাবাদ, অনুসন্ধিসু মন ও সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, প্রকৃতি থেকে আমাদের বিজ্ঞান শিখতে হবে। অনুসন্ধিৎসু মন আমাদেরকে যুক্তি বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়, কুসংস্কার দূর করে এবং প্রকৃত বিজ্ঞানের দিকে অন্বেষণে সাহায্য করে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত, বৃহত্তর পরিসরে আমাদের ভাবতে হবে, এখানে ছোট বড় কোনো ভেদাভেদ নেই। বিজ্ঞানের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন প্রায় প্রত্যেকে। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে এই কথা বলে বলা হয় আমাদেরকে এখন স্কিল ডেভেলপমেন্টের কথা ভাবতে হবে, বিজ্ঞান শিখে যেন আমরা নিজেরা কিছু করার কথা ভাবতে পারি যাতে অন্যেরও কর্মসংস্থান হতে পারে– এই দিন এসে গিয়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞান শেখার এটাই তো খুব বড় একটি পাওনা বলে নতুন প্রজন্মকে আরো সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা উৎসাহ দেন।
এ দিনের সভা সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও বিজ্ঞান কর্মী ডঃ কমল কৃষ্ণ দাস ও বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রী নাফিসা ইসমাত এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুসন্ধান সোসাইটির সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct