আপনজন ডেস্ক: থলে থেকে বিড়াল এখন বের হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আশীর্বাদে এভাবেই ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে বিজেপি, এই অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, নেতা ও কর্মীদের সম্মেলনে এভাবেই সমালোচনায় মুখর হলেন মমতা। মমতার অভিযোগ, বিজেপি বাংলা দখলের জন্য বহিরাগতদের দ্বারা ভোটার তালিকা সংশোধনের চক্রান্ত করেছিল। আমরা এটা আর হতে দেব না। বিজেপি যদি তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনায় সফল হয়, তার অর্থ বাংলার সংস্কৃতি শেষ হয়ে যাবে। আমরা অতিথিদের সম্মান করি, কিন্তু বহিরাগতদের বাংলা দখল করতে দেব না। এটা দিল্লি বা মহারাষ্ট্র নয়। ইসির আশীর্বাদে এটা করা হচ্ছে।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে যে বিধানসভা আসনগুলিতে বিজেপির হারের ব্যবধান কম ছিল, সেখানে কারচুপি করা হচ্ছে।
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিম বলেন, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের যাতে ভোটে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দেখতে চাই, কে বেশি শক্তিশালী, জনগণ নাকি এজেন্সি (ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা)। হাতে একগাদা কাগজ হাতে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একটি তালিকা পড়ে শোনান এবং বলেন, আগামী বছরের গোড়ার দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে ভোটার তালিকায় কারচুপি করা হচ্ছে। তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ভুয়ো ভোটারদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বন্ধ করা আপনাদের দায়িত্ব।মমতা বলেন, কংগ্রেসে তার দিনগুলিতে যখন প্রয়াত মন্ত্রী তথা মমতার পরামর্শদাতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সিপিএমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ‘তরমুজ’ তকমা দেওয়া হয়েছিল, তখন মমতা বিজেপিকে ‘গেরুয়া কমরেড’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বিজেপি এখন গেরুয়া কমরেড। বাইরে গেরুয়া, ভেতরটা লাল। মমতা জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও মুর্শিদাবাদের রানিনগর থেকে তিনি নামের তালিকা পেয়েছেন, নতুন ভোটাররা কীভাবে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া একই সচিত্র পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে পুরনো ভোটারদের সরিয়ে দিচ্ছেন।
তিনি রানিনগরের মহম্মদ শহিদুল ইসলাম নামে একজনের নাম পড়ে শোনান, যার বিপরীতে হরিয়ানার সোনিয়া দেবীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এপিক কার্ডে। হরিয়ানার আরও একজন মনজিৎতে রানিনগরের মোহাম্মদ আলী হুসেনের একই এপিক নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রানিনগরের পানেরা বিবির একই এপিক কার্ডে নাম রয়েছে হরিয়ানার দীপকের। তাই মমতা প্রশ্ন তোলেন নির্বাচন হরিয়ানায় না পশ্চিমবাংলায় হবে? তিনি বলেন, এঁরা মুর্শিদাবাদে ভোট দেবেন, যেখানে প্রথম দফায় নির্বাচন হবে। তারপর উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোট দেবেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরোপুরি গুজরাতের মানুষদের নিয়ে তৈরি। যেমন আহমেদাবাদের জিগনেশ মাধবন আর গঙ্গারামপুরের তসলিম মিয়াঁর একই এপিক কার্ড নম্বর। মমতার অভিযোগ, বিজেপি দুটি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ বিলিয়ন মাইন্ডস এবং আরেকটি সহায়ক সংস্থা ইন্ডিয়া ৩৬০ নিয়োগ করেছে, যাতে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় গুজরাত, রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মতো দূরবর্তী রাজ্যের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এসব সংস্থার হয়ে যারা কাজ করছেন তারা কোনো সরজমিন সমীক্ষা করেননি। কতিপয় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডেটা অপারেটরের সহায়তায় তারা ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। মমতা বলেন, বাংলার মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না। অনলাইন মানে এই নয় যে হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাবের ভোটাররা এখানে ভোট দিতে পারবেন। প্রয়োজনে আমরা দিনের পর দিন নির্বাচন ভবনের বাইরে ধর্নায় বসে থাকতে পারি। তিনি বলেন, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বিষয়টি তাঁর নজরে এনেছেন। এভাবেই তারা মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে জিতেছে। তারা (শিবসেনা (ইউবিটি), মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং দিল্লিতে আম আদমি পার্টি) এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আমরা তাদের ধরে ফেলেছি। এটা নিশ্চয়ই প্রতিটি জেলাতেই হয়েছে। আমরা এটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে দিতে পারি না। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরও বেশ কয়েকজন সাংসদ, বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী এবং দলীয় নেতাদের নিয়ে একটি কমিটির নেতৃত্বে প্রতিটি ব্লকের ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct