সেখ নুরুদ্দিন , কলকাতা, আপনজন: রবিবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে মহা সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হলো আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১.৩০ নাগাদ। প্রথম পর্বে ছিল আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের স্বাগত ভাষণ। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সম্মাননা জ্ঞাপন। এই পর্বের অনুষ্ঠানে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয় প্রগতির সম্পাদক মহম্মদ আলি, শিক্ষাব্রতী ও সমাজ কর্মী সনৎ কর, এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মইনুল হাসানকে। এরপর দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর তৃতীয় পর্বে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হয় ২.৫৫ নাগাদ। প্রকাশিত হয় আমজাদ হোসেন সম্পাদিত ‘লুৎফর রচনা সমগ্র’, মুহাম্মদ মতিউল্লাহ সম্পাদিত কবিরুল ইসলামের নির্বাচিত কবিতা, অশোক পাল রচিত জীবনী মালা ‘আজহারউদ্দীন খান’, আবু রাইহান সম্পাদিত আব্দুস শুকুর খান ও অন্যান্য বহু গ্ৰন্থ ও পত্র -পত্রিকা। এই বার্ষিক সাংস্কৃতিক অধিবেশনের অন্যতম কর্মসূচি ছিল ‘উজ্জীবন ২০২৫’ (জানুয়ারি- মার্চ) সংখ্যা প্রকাশ।
চতুর্থ পর্বের অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করা হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য অনেক গুণীজনকে। শহীদুল্লাহ পুরস্কারে ভূষিত করা হয় লোক সংস্কৃতির গবেষক মুহাম্মদ আয়ুব হোসেনকে (পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর ধর্মকন্যা রোজিনা পারভীন), রোকেয়া পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যাপিকা প্রতিভা সরকারকে। এছাড়াও মশাররফ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় এই সময়ের বিশিষ্ট সাহিত্যিক রক্তিম ইসলামকে। আলাপচারিতায় আর সুধীজনের কথায় কল মুখরিত হয়ে উঠেছিল আলিয়া প্রাঙ্গণ।
এদিন আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন মীর রেজাউল করিম। প্রতিভা সরকার বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন। সেই সঙ্গে যেসব মুসলিম বিদূষী রমণী গোটা দেশজুড়ে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই জানি না দেশের প্রথম মহিলা শিক্ষক ফাতিমা সেখ ও সাবিত্রীবাঈ ফুলের কথা। এছাড়া অনুষ্ঠান মঞ্চে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সুফিউর রহমান, প্রবীণ কবি একরাম আলি, নতুন গতির সম্পাদক এমদাদুল হক নূর, দৈনিক আপনজন-এর সম্পাদক জাইদুল হক, মেঘ মুখোপাধ্যায়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা সান্যাল, অধ্যাপক আফসার আলি, তথ্যচিত্র পরিচালক মুজিবর রহমান, সাংবাদিক কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, একরামূল এইচ সেখ প্রমুখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে পরিবেশিত হয়েছিল হামদ- নাতে রসুল, সংগীত, কবিতা ও গল্প পাঠ। সাহিত্য ঝংকারে জমজমাট হয়ে উঠেছিল অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তথ্য চিত্র প্রদর্শনী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারু ভাবে পরিচালনা করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ। আলিয়া সংস্কৃতির বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্য ও সাংস্কৃতি মনস্ক বহু মানুষ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিশিষ্ট লেখক সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেদায়েতুল্লাহ, ড. মানাজাত আলি, কাজী তাজুদ্দিন, ইকবাল দরগাই, খায়রুল আনম প্রমুখ। সব মিলিয়ে রবিবার চাঁদের হাট হয়ে উঠেছিল আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct