এম এস ইসলাম , বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান শহরের ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড দেখলে মনে হবে আমরা উন্নত দেশে পৌঁছে গেছি। শহরের অন্যান্য জায়গার অবস্থা কিন্তু অন্যরকম। বিশেষ করে শহর বর্ধমানের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল, স্কুল পরিকাঠামো ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। সংখ্যালঘু এলাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে পারাপার করাই মুশকিল। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোটে বিধায়ক থেকে শুরু করে বেশির ভাগ কাউন্সিলর জয়লাভ করেছেন, কিন্তু সেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার দুঃখ ঘুচেনি। সংখ্যালঘু এলাকার ভোট ছাড়া বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ককে এবার আর জয়লাভ করতে হতো না, এই সত্য কথাটা সবার জানা। গত লোকসভার ভোটে অনেক পৌর আসন তৃণমূল কংগ্রেস অনেক পিছিয়ে আছে। বর্ধমান দুর্গাপুরের এমপি কীর্তি আজাদ জয়লাভ করেছে সংখ্যালঘুদের একচেটিয়া ভোটে। বর্ধমান শহরের উন্নয়ন নিয়ে দলের মধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেখ বাদশা। তিনি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। সেখ বাদশার অভিযোগ, গোটা শহরের ৩৩টি ওয়ার্ডে উন্নয়ন না হলেও মাত্র দু’তিনটি ওয়ার্ডে বিশেষ সুবিধা মিলেছে।
সেখ বাদশা বলেন, “বিধায়ক খোকন দাসের পাড়া ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং আগে যে ওয়ার্ড থেকে তিনি লড়তেন, সেই ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় উন্নয়ন হয় না।” তাঁর মতে, বাকি ওয়ার্ডগুলো উন্নয়নের অভাবে অন্ধকারে রয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ শহরের বহু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, “প্রতিবছর লহর বা খাল পরিষ্কারের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়। কিন্তু এবার সেই বরাদ্দ হয়নি, যার ফলে এক পশলা বৃষ্টিতেই জল জমেছে।” এছাড়াও, রাতের অন্ধকারে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে হকার উচ্ছেদের অভিযোগ করেন তিনি। কোনো নোটিশ ছাড়াই দোকান বন্ধ অবস্থায় বুলডোজার চালিয়ে দোকান ভাঙা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। সেখ বাদশা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সৌন্দর্যায়ন আগে প্রয়োজন নয়, আগে প্রয়োজন মানুষের পেটের ভাত। গরিব মানুষের দোকান ভাঙা হয়েছে। আমি তাঁদের পাশে আছি। এরা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী, যাঁরা ভোটে জেতায়।” চেয়ারম্যান এবং বিধায়ককে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আবার এখানেই দোকান হবে।”
বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, সরকারি জায়গায় কোনো দোকানপাট করতে দেয়া হবে না। কেউ পয়সা নিয়ে দোকান বসালে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। তবে এই ঘটনার পর বিরোধী শিবির সরব হয়ে উঠেছে।
কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, “সঠিক কথাটা সাহস করে বলেছেন সেখ বাদশা। আজ সামান্য বৃষ্টিতেই শহর জলমগ্ন। নিকাশি নালা পরিষ্কার হয় না, রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এবার নাগরিকরা ভোটবাক্সে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন।”
বিজেপি নেতা সৌম্যরাজ ব্যানার্জি বলেন, “শহরে কোনো গার্ডেন নেই। রাস্তা নোংরা, নর্দমা সংস্কার হয় না। বিসি রোড তার জলন্ত উদাহরণ। সেখ বাদশা যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সত্য।”
বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেও উন্নয়ন বঞ্চনার ক্ষোভ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এক জায়গায় শুধু আলো আর আলো, অন্যান্য জায়গায় অন্ধকার। শহরের বেশিরভাগ মানুষ ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যক্তি বাদশার বক্তব্য সমর্থন করেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct