আপনজন ডেস্ক: জার্মানির নতুন নির্বাচন নিয়ে গোটা ইউরোপের নজর এখন দেশটির দিকে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের পর এই নির্বাচন দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফেরাবে বলে অনেকেই আশা করছেন। তবে কট্টর ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র উত্থান নিয়ে আশঙ্কাও বাড়ছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির ভোটাররা নতুন সরকার নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে যাচ্ছেন। এর আগের জোট সরকারের পতন হয় সাড়ে তিন মাস আগে, যখন বাজেট নীতি ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে দেশটির অর্থমন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে নতুন সরকার গঠিত হবে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
এবারের নির্বাচনে এএফডি-র জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনমত জরিপ অনুযায়ী, দলটি ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে পারে এবং পার্লামেন্টে তাদের আসন সংখ্যা ১৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৬৩০। যদিও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এএফডি-এর সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে, তবে কোনো একক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন কঠিন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর ফলে নতুন সরকার গঠনে এএফডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এএফডি প্রধান অ্যালিস ওয়েইডেল তরুণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয়। বিশেষ করে টিকটকে তার ৮ লাখ ৬৬ হাজার ফলোয়ার রয়েছে, যা তাকে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে। ইলন মাস্ক ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। দলটি জার্মানির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের কথা বলছে।
অন্যদিকে, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টি (সিডিইউ) এবারের নির্বাচনে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দলটির প্রার্থী ফ্রেডরিখ মার্জ বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে জার্মানি ইউরোপের নেতৃত্ব নেবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি বলেন, “আমরা এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে। রাজনৈতিক শৃঙ্খলা বদলে যাচ্ছে, এবং আমাদের সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।” বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে পারে, তবে শলৎজের পুনরায় চ্যান্সেলর হওয়া অনিশ্চিত।
গত কয়েক মাসে জার্মানির বিভিন্ন শহরে একাধিক প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় অভিবাসীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যানহেইম, সোলিনজেন, ম্যাগডেবার্গ, আসচাফেনবার্গ ও মিউনিখে সংঘটিত হামলাগুলোতে সন্দেহভাজনদের বেশিরভাগই অভিবাসী। এর ফলে দেশে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নির্বাচনে এই ইস্যুটি অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
জার্মানির এই নির্বাচন শুধু দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নয়, সমগ্র ইউরোপের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। অভিবাসন, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে যে নতুন নীতিগুলো গৃহীত হবে, তা শুধু জার্মানিতেই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct