এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের আওতায় থাকা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-এর শিক্ষকদের ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেল। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ কথা জানিয়েছে ৷ ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-এর শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষকতা করতে পারবেন পাশাপাশি অবসরের সময় এককালীন ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা পাবেন ৷ এই নির্দেশিকা ১লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে ৷উল্লেখ্য, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আওতায় থাকা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-এর শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি জারি হয় গত জানুয়ারি মাসে, পাশাপাশি অন্য দুই পরিষেবা (৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি এবং অবসরের সময় এককালীন ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সুবিধা) চালু হয়েছে বছরখানেক আগে থেকেই ৷ তবে সরকারিভাবে একই সাথে স্কুল শিক্ষা দপ্তর এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি কেন জারি হল না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷ অসন্তোষ সৃষ্টি হয় সংখ্যালঘু মহলে ৷ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের আওতায় কর্মরত শিক্ষকরা মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানান ৷ সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসা বিষয়ক ও মাদ্রাসার শিক্ষা দপ্তরের মুখ্য উপদেষ্টা আবদুস সাত্তারের কাছেও এবিষয়ে একাধিক দিন দরবার করতে দেখা যায় এমএসকে-এসএসকে শিক্ষকদের ৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার নবান্নের নির্দেশিকায় স্বস্তি মিলল সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৷ নির্দেশিকা জারির পর সন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকেই ৷ সূত্রে খবর, এবার থেকে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের আওতায় থাকা এসএসকের এক জন সহায়ক বা সহায়িকা (শিক্ষক) বেতন পাবেন ১১,৫৯৩ টাকা। এক জন মুখ্য সহায়ক বা মুখ্য সহায়িকা (প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা) বেতন পাবেন ১১,৯৮৭ টাকা। এমএসকের এক জন সম্প্রসারক বা সম্প্রসারিকা (শিক্ষক বা শিক্ষিকা) বেতন পাবেন ১৫,০৭১ টাকা। মুখ্য সম্প্রসারক বা সম্প্রসারিকা (প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা) বেতন পাবেন ১৬,২৩১ টাকা।
উল্লেখ্য রাজ্যে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য উপযোগী করে তোলা হয় এই এসএসকে এবং এমএসকেতে। সেখানে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। তার পরেই তারা স্কুলে ভর্তি হয়। রাজ্যে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ১৬ হাজার। মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা হল দেড় হাজার। মাদ্রাসাতেও রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে। সেগুলির সংখ্যা ৪০০। এখন প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক রয়েছেন রাজ্যের এমএসকে এবং এসএসকেতে। ২০১০ সালে তৎকালীন বাম সরকার একটি বিল আনে বিধানসভায়। সেটি পাশও করানো হয়। তাতে বলা হয়, এসএসকে, এমএসকের শিক্ষকদের জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করা হবে। তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ওই বিলে অনুমতি দেননি। তাই বিলটি আর আইনে পরিণত হয়নি। এই শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন তাঁদের বেতন বৃদ্ধি পায়নি। নতুন নিয়োগও হয়নি। ২০১৮ সালের শেষ থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৯ সালে পঞ্চায়েত দফতর থেকে শিক্ষা দফতরের অধীনে আনা হয় এই এসএসকে এবং এমএসকেগুলিকে। ২০২১ সালে ঘোষণা করা হয় যে, এই শিক্ষকদের ৫ লক্ষ টাকা অবসরকালীন ভাতা দেওয়া হবে। এককালীন দেওয়া হবে এই ভাতা। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত তারা শিক্ষাকতা করতে পারবেন ৷ প্রত্যেক বছর ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হবে। সেই মতো এ বছর এই বেতন বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। তবে সেই বিজ্ঞপ্তি ছিল শুধুমাত্র স্কুল শিক্ষা দপ্তরের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য ৷ বঞ্চিত হয় সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের আওতায় থাকা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-এর শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ এবার তাদের জন্যও রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করল ৷ এবার থেকে একই সুবিধা পাবেন তাঁরাও ৷
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct