আপনজন ডেস্ক: মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের জবাবি বক্তৃতা দিতে গিয়ে শিকল বেঁধে ভারতীয়দের আমেরিকা থেকে দেশে ফেরানোর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল সরকারের সঙ্গে জঙ্গি-যোগের যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে মিনিটের মধ্যে পদত্যাগ করব ৷
মুখ্যমন্ত্রী আমেরিকা থেকে “অবৈধ” ভারতীয় অভিবাসীদের শিকলে বাঁধা বিতাড়নের নিন্দা করে ওই ঘটনাকে “লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের সময় “অমানবিক আচরণের” প্রতিবাদ করেছেন কিনা তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় নাগরিকদের নির্বাসনের বিষয়ে নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের প্রত্যাবর্তনে মর্যাদার অভাবের নিন্দা করে জোর দিয়ে বলেন, কেন্দ্রের উচিত ছিল তাদের সম্মানের সাথে ফিরে আসা নিশ্চিত করা। মমতা বলেন, যারা দেশে ফিরে এসেছে তাদের শিকলে বেঁধে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কেন? বলা হচ্ছে, এটাই তাদের প্রটোকল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত ছিলেন, তখনও তাদের একইভাবে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রোটোকল বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদা হতে পারে না। মানবতা সবার উপরে থাকা উচিত। কিন্তু আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কি এর বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “অমানবিক পরিস্থিতিতে” নির্বাসিতদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই জাতীয় আচরণ এড়ানো যেত।
আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দায়িত্ব নিলে তারা সম্মানের সঙ্গে ফিরতে পারত। কিন্তু আপনি কোনো দায়িত্ব নেননি। হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে ৪০ ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হয়েছে তাদের। এমনকি নারী ও শিশুরাও রেহাই পায়নি।
নির্বাসিতদের শিকলে বেঁধে ফিরিয়ে আনা ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ছিল তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবহণ বিমানের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, আপনি যখন আমেরিকায় ছিলেন (সরকারি সফরে), তখন অবৈধ অভিবাসীদের সেখান থেকে শিকলে বেঁধে বের করে আনা হয়। আপনি অন্তত বলতে পারতেন ‘তারা আমাদের নাগরিক, আমরা তাদের ফিরিয়ে নেব’। কিন্তু এমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জাতীয় সুরক্ষা বা বিদেশনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিত করতে পারত যে ভারতীয় নাগরিকদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা হবে। মমতা আরও বলেন, এরা বাংলার নয়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, পঞ্জাবের বাসিন্দা। আপনি বলতে পারতেন যে আমরা একটি ফ্লাইট পাঠাচ্ছি এবং আপনি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট) সেই ফ্লাইটগুলিতে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পারেন। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি দায়িত্ব নিতেন তাহলে এই মানুষগুলো মর্যাদার সঙ্গে ফিরে আসতে পারতো। কিন্তু আপনি দায় নিলেন না। এত কিছুর পরও আমরা কিছু বলিনি। আমি এটা বলতাম না, কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন।
উল্লেখ্য, আমেরিকা থেকে বেশ কিছু অবৈধ অভিবাসীকে শিকল বাঁধা অবস্থায় ভারতে নির্মমভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। অন্যদিকে, এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল সরকারের সঙ্গে জঙ্গি-যোগের যে অভিযোগ তুলেছেন, তার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হন ৷ মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে মিনিটের মধ্যে পদত্যাগ করব ৷ বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান।
এদিন বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি নাকি হিন্দু ধর্মকে তাচ্ছিল্য করি ? আমাকে শুনতে হবে যে, জম্মু কাশ্মীরের জঙ্গিদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৷ বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে থাকি? যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি এক মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দেব।
তিনি বলেন,“আমি প্রধানমন্ত্রীকেও এটা চিঠি লিখে জানাব যে, যদি টেরোরিস্টদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে চলে যাব । কোনও সম্পর্ক না-থাকলেও বলছেন টেরোরিস্টদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এভাবে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ৷ এর থেকে মরে যাওয়া ভালো ৷ উল্লেখ্য, গতকালই সাসপেন্ড হওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী শাসকদল ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছিলেন, এই সরকার বাংলাদেশের আনসারুল বাংলার সরকার ৷ এই সরকার কাশ্মীরি জঙ্গি জাভেদ মুন্সির সরকার ৷ এই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম তোষণকারী, হিন্দুবিরোধী ও মুসলিম লিগ টু-এর সরকার ৷
অপরদিকে, মহাকুম্ভে একের পর এক দুর্ঘটনা, পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতা। উত্তরপ্রদেশের প্রায়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলাকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলে উল্লেখ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ বিধানসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেন, মহাকুম্ভ আমি নাই বা বললাম ৷ ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে ৷ মৃত্যুকূপের মতো ৷ গত ১৩ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা শুরু হয়। সেখানে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct