আপনজন ডেস্ক: অনেকটাই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে এবার নাম জড়াল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ, রাজ্যসভার দস্য মমতাবালা ঠাকুর, বিধায়ক শওকাত মোল্যা সহ আরও বেশ কয়েকজন বিধায়কের।
এই সব উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের চার্জশিটেই ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে। আর ওই খবর জানাজানি হতেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে সুপারিশ করা সব প্রার্থীদের যে চাকরি হয়েছে এমনটা নয়। কিন্তু বেশিরভাগেরই চাকরি হয়েছে।
এতদিন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলছি। এবার তা অনেকটা ব্যুমেরাং হয়ে তারাও বাদ যাচ্ছে না। বিশেষ করে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু যখন রাজ্য বিধানসভা তোলপাড় করে বেড়াচ্ছেন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে। এমনকী পথে প্রান্তরে মিটিং মিছিল করছেন, তখন তার নিজের সাংসদ ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী জড়িয়ে পড়লেন সুপারিশ করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে। যদিও
সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। তাঁর কথায়,’আগে চার্জশিট পড়ে দেখি তার পর বলব। বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের কথা বলেছিলেন। প্রাথমিকে শিক্ষক ও অন্যান্য নিয়োগ নিয়ে তদন্তে নেমে গত বছর জুন মাসে বিকাশ ভবনের ওয়্যারহাউসে অভিযান চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ওই তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর নথি। সেই নথিতেই দিব্যেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি অনেকে নেতা-নেত্রীর নামের পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং শওকত মোল্লাদেরও নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের খবর,রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিলেন রাজ্যের একাধিক প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীরা। তাঁরা যাদের নাম সুপারিশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই চাকরিও পেয়েছেন। সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে দেখা যাচ্ছে, মোট ৩২৪ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩৪ জন চাকরি পেয়েছিলেন বলেও জানানো হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। কারা ওই সুপারিশ করেছিলেন তাঁদের নাম-পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দুর নামের পাশে সাংসদ লেখা। এক সময়ে তমলুক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন শিশির অধিকারীর পুত্র। দাদা শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পর তিনিও গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান। কিছু নাম সরাসরি কোনও একটি অফিসে সুপারিশ করা হয়েছিল। বোঝার সুবিধার জন্যই ‘রিসিভড অ্যাট অফিস’ লিখে রাখা হয়েছিল নথিতে। সিবিআই সূত্রে খবর, সুপারিশকারী প্রার্থী তালিকা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাঠিয়ে দিতেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে।
প্রাথমিকে চাকরির সুপারিশকারী হিসেবে অন্য যেসব বিধায়ক কিংবা রাজনীতিকদের নাম সামনে এসেছে তারা হলেন, নির্মল ঘোষ, বীণা মণ্ডল, শওকত মোল্লা, শ্যামল সাঁতরা, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গুলশন মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী। তবে সবচেয়ে বেশি সুপারিশ করেছেন বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা। তিনি ২২জনের নাম সুপারিশ করেছেন। এর পরে রয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর। তার সুপারিশকারীর সংখ্যা ২০। নির্মল েঘাষ ১৬ জনের নাম, বীণা মণ্ডল ১৩ জনের নাম, দিব্যেন্দু অধিকারী ১১ জনের নাম শুলশন মল্লিক ১০ জনের নাম, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ৫জনের নাম, ভারতী ঘোষ ৪ জনের নাম ও শওকাত মোল্লা ২ জনের নাম সুপারিশ করেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct