সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা-১ ব্লকের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নহরপাড়া এলাকায় সেচ দপ্তরের জমি ঘিরে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের এক সদস্য ও প্রধানের স্বামী বেআইনিভাবে ওই জমি দখল করার চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পঞ্চায়েত সদস্য এমদাদুল হক তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু তারা টাকা দিতে অপারগ হলে তাদের বাড়িঘর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ফলে ঘরের এক পাশে বসবাসের ঘর থাকলেও রান্নাঘর ও শৌচালয় বেড়ার ওপারে, যা চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নেসবাহুল বেওয়া বলেন, “পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তা দিতে পারিনি বলেই বাড়ির সামনে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।” একই অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলি ও একরাম আলি। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা সেচ দপ্তরের জমিতে বাস করছি, কিন্তু কখনো কোনো নোটিশ পাইনি। অথচ আমাদের রান্নাঘর ভেঙে সেখানে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে বাড়িঘর ঘিরে ফেলা হয়েছে যে, বের হতে গিয়েই শিশু-কিশোররা কাঁটাতারে আহত হচ্ছে।”
অন্যদিকে এই জমি সেচ দপ্তরের মালিকানাধীন বলেই জানিয়েছেন দপ্তরের জিয়াগঞ্জ বিভাগের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রিয় দাস। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত জমিটি সেচ দপ্তরের মালিকানাধীন রয়েছে। পঞ্চায়েত বা তার কোনো সদস্য এই জমি দখল করতে পারেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে, তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।” এদিকে লালবাগের মহকুমা শাসক বনমালি রায় বলেন, “সেচ দপ্তরের জমি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ দখল নিতে পারে না। বিষয়টি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য এমদাদুল হক অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “জমিটি বেদখল হয়ে যাচ্ছিল, তাই আমরা সীমানা নির্ধারণ করে ঘিরে দিয়েছি। এখানে হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।” তবে টাকা দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” এ বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আললাম শেখ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অফিসে আসুন, আমরা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেব।” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নহরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ১৯৮৭ সালে আখরীগঞ্জের নির্মলচরে পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বসবাস করলেও প্রশাসন কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, অথচ এখন স্থানীয় পঞ্চায়েত তাদের উৎখাতের চেষ্টা করছে। গ্রামবাসীরা অবিলম্বে বেড়া অপসারণ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রশাসন যেন তাঁদের বসবাসের বৈধতা নিশ্চিত করে তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct