নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: শিক্ষকের বদলির আবেদন বছরের পর বছর ফেলে রাখার অমানবিক সিদ্ধান্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট ম্যানেজিং কমিটিকে ৫০, ০০০ টাকা জরিমানা করল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি প্রজেনজিৎ বিশ্বাসের বেঞ্চ। ওই জরিমানার টাকা যা আবেদনকারী শিক্ষিকাকে দিতে বলা হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া রায়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্কুল পরিচালন সমিতির সভায় েযকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন তাদের সম্মিলিতভাবে এই ৫০ হাজার টাকা আবেদনকারী শিক্ষিকা মানষী রদারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, আবেদনকারীর পক্ষে উজ্জ্বল রায় জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের সুমতীনগর শরৎ কুমার হাই স্কুলেরর শিক্ষিকা মানসী সর্দার তার শারীরিক কারণে বদলির আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও চারপতি প্রজেনজিৎ বিশ্বারে বেঞ্চ এই রায় দেয়। বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির উদাসীনতার কারণে আদালত এই ম্যানেজিং কমিটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। আবেদনকারী শিক্ষিকার শারীরিক ও মানসিক কষ্টের কথা বিবেচনা না করে, ম্যানেজিং কমিটি যে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে, তা নিন্দনীয়। আদালত ম্যানেজিং কমিটির এই আচরণকে অমানবিক আখ্যা দিয়েছে এবং আবেদনকারীর প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। আদালত রায়ে বলেছে, যদি কোনো শিক্ষক বা কর্মী অসুস্থতার কারণে বদলির আবেদন করেন, তাহলে আবেদনকারীর রোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এই মামলায় দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারী শিক্ষিকা ২০১৯-২০২০ সাল থেকে তার রোগের কারণে বদলির আবেদন করে রেখেছেন, যা ম্যানেজিং কমিটি বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। এমনকি তারা এখন বলছেন যে, আবেদনকারীর জমা দেওয়া নথিপত্র সঠিক নয়। আদালত বলেছেন, এই ধরনের মানবিক আবেদন বছরের পর বছর ফেলে রাখা অত্যন্ত অসংবেদনশীলতার পরিচয়।আইনজীবী আরও বলেন, এই রায় শুধু শিক্ষিকা মানসী সর্দার এর ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এটি প্রমাণ করল যে, প্রশাসনিক জটিলতা বা গাফিলতির কারণে কোনো শিক্ষকের ন্যায্য অধিকার খর্ব হতে পারে না। আদালত পরিচালনা কমিটির গাফিলতির কারণে তাদের উপর জরিমানা ধার্য করে এটি নিশ্চিত করেছেন যে ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে।
শিক্ষক সংগঠন অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, বদলি নীতি সরল করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে আবেদন জানিয়ে আসছিলাম, শিক্ষা দপ্তর বিষয়গুলো নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এছাড়াও, কিছু ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসায় হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এই মামলায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, কোনো অসুস্থ শিক্ষকের বদলির আবেদন বছরের পর বছর আটকে রাখা একপ্রকার অন্যায় ও অমানবিকতা। মাননীয় আদালত এই বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির ায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে যথাযথ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই রায় শিক্ষাক্ষেত্রে যেকোনো প্রশাসনিক জটিলতার আড়ালে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে দেবে না। আদালতের এই নির্দেশ যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct