নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হল বুধবার। বাজেট নিয়ে সমালোচনা করল পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আইএসএফ।
এদিনের বাজেট উপস্থাপনের সময় বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন নওশাদ সিদ্দিকী। বাজেট পেশ শেষে নওশাদ অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর কবিতা দিয়ে শেষ করে চমক দেবার চেষ্টা হলেও বাজেটে নতুন চাকরির কোন কথা নেই। এই রাজ্য থেকে লক্ষ, লক্ষ দক্ষ শ্রমিক অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। এই রাজ্যে তারা তাদের দক্ষতা দেখাতে পারছেন না কাজ নেই বলেই। তার অদক্ষ কোন কাজ কিংবা অস্থায়ী কাজ নিয়ে অভিবাসী শ্রমিক হচ্ছেন। এই বাজেট এই সমস্যার কোন সুরাহা করতে পারেনি।
নওশাদরে আরও অভিযোগ কোটি, কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন না।
নওশাদ আরও বলেন, , স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে যে বিপুল পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার, সেটা নিয়ে বাজেটে ছিঁটেফোটা কথা নেই। শিক্ষাক্ষেত্রেও কোন নতুন কথা নেই। কোভিড পরবর্তী সময়ে আমাদের রাজ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই জায়গা থেকে আমরা দেখছি আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য কোন পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ কার্যত বন্ধ, অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে না। ল্যাবেরোটরি, লাইব্রেরিতে পরিকাঠামো নেই। সেই খাতে টাকাও নেই।
কৃষিক্ষেত্রে চাষবাস বন্ধ করে কৃষক অন্য কাজে যোগ দিতে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে নওশাদ বলেন, অভিবাসী শ্রমিকের একটা বড় অংশই হচ্ছে কৃষক।
রাজ্য সরকারি কর্মীরা বকেয়া মহার্ঘ ভাতার জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছেন। প্রধানত তার চাপেই বাজেটে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ডিএ’র হারের সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের ফারাক এখনও ৩৫ শতাংশ রইল।
নওশাদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও আদিবাসী উন্নয়নেও টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে শেষ পর্যন্ত টাকাগুলি খরচ হয় না। সংখ্যালঘু দপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়, তার ৩০ শতাংশও রাজ্য সরকার খরচ করে না।
সুতরাং প্রতি বছরই এই প্রতিশ্রুতিগুলি দেওয়া হয়। অর্থও বরাদ্দ হয়। তাহলে টাকাগুলি যায় কোথায়?
এদিকে ঋণভারে জর্জরিত রাজ্য। এবার আরো ঋণের বোঝা চেপেছে। রাজ্য সরকারের মোট ঋণ
২০২৩-২৪ ছিল ৬ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ সালে সেটা দাঁড়াল ৬ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। এই অর্থবর্ষে সেটা বেড়ে গিয়ে হয়েছে
৭ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা। সরকার নতুন করে বাজার থেকে ঋণ নেবে ৮১ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। রাজ্যের প্রতিটি অধিবাসীর মাথা পিছু প্রায় ৬০ হাজার টাকার ঋণ। এই ঋণ কি সরকারের খেলা মেলা ও উৎসবের পেছনেই ব্যয় হচ্ছে? এই প্রশ্ন খুব নওশাদের মতে, তাই বাজেট আসে, বাজেট যায়। বড়, বড় টাকার অঙ্ক দেখানো হয়। মানুষের জীবনের কিন্তু কোন মানোন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বব়ং, মান নেমে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, ন্যূনতম নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য হ্রাস পাচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct