এম মেহেদী সানি , কলকাতা, আপনজন: এবারের বাজেটে আমার একটা ‘ভিশন’ রয়েছে। সেটা হল কর্মসংস্থান। বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশিই শহরের অর্থনীতিও পুষ্ট হবে। আমরা মেলবন্ধন করতে চাই।’’ বাংলার ছেলেমেয়েরা যাতে রাজ্যেই কাজ পান, তাঁদের যাতে অন্যত্র যেতে না হয়, সে ব্যাপারেও গুরুত্ব আরোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাংলার যোগ্যতাকে সম্মান দেওয়া হয় না।’’
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পে কমিশনের টাকা-সহ এই ডিএ। ভবিষ্যতে আরও পাবেন। আমরা সবটাই ক্লিয়ার করব।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ৯৪টি স্কিম আছে আমাদের।
আমরা কথা দিলে কথা রাখি। আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র।
লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় রাজ্যের। আমাদের থেকে টুকলি করে অনেক রাজ্য এটা চালু করেছে। আবার কেউ কেউ বন্ধও করে দিয়েছে। অনেকে অনেক শর্ত রাখে। আমাদের লক্ষীর ভাণ্ডার ইউনিভার্সাল। ১২ কোটি মহিলা পায়। দুয়ারে সরকারে আরও কয়েক লক্ষ মেয়ে যুক্ত হয়েছে।
প্রায় ৯ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পায়। ৮০ হাজার পড়ুয়া স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছে। ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ পান বার্ধক্য ভাতা। বিধবা ভাতা পেয়েছেন ২০ লক্ষের বেশি মহিলা। তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে ৫২ লক্ষের বেশি স্মার্টফোন দেওয়া হবে। এছাড়া আমরা বই, পোশাক দিই বিনামূল্যে। ১৮ কোটি পড়ুয়া এতে উপকৃত হয়। ৬৮,০০০ মানুষকে কৃষি পেনশন দেওয়া হচ্ছে।
১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ চাকরি করছে এমএসএমই-তে।
বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে বিরোধীরা বারবার প্রশ্ন তোলে। সেই প্রসঙ্গে এদিন মমতা জানান, এবারের সম্মেলন বাদ দিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো সম্মেলন হয়েছে, তাতে রাজ্য মোট ১৯ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছে। তার মধ্যে ১৩ লক্ষ টাকার প্রজেক্ট শেষ হয়ে গিয়েছে।
রূপশ্রী প্রকল্পের বাইরে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার শ্রমিকের পরিবার বিয়ের জন্য টাকা পেয়েছে।
অনুর্বর জমি আমরা উর্বর করেছি। রাজ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপন্ন হচ্ছে।
ক্ষমতায় আসার পর ইলিশ মাছের রিসার্চ সেন্টার তৈরি করেছিলাম। তারপর থেকে আর ওপারের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না।
১ লক্ষ ছেলেমেয়ে কাজ পাবে দেউচা পচামিতে। ওখান থেকে কয়লা পেলে বিদ্যুতের দাম অনেক কমে যাবে।
শিল্প প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, ডেউচা-পাঁচামিতে যে পরিমাণ কয়লা মিলবে, তাতে আগামী ১০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের কোনও চিন্তা থাকবে না।
বানতলা চর্মনগরীতে ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষ মানুষ কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশিই, যে পরিমাণ বিনিয়োগ সেখানে আসছে, তাতে অচিরেই আরও আড়াই লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে ছ’টি রাস্তা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে রাস্তাগুলির দু’ধারে গড়ে উঠবে শিল্প। রঘুনাথপুর-তা়জপুর, ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-কোচবিহার, খড়্গপুর-মোড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া-জোকা-কলকাতা— এই ছ’টি করিডর তৈরির প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষে এই ছ’টি রাস্তারই নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪,৪০০ কোটি টাকা। মমতার কথায়, ‘রাস্তার কাজ হতে হতে যাবে। পাশাপাশিই চাকরিও হতে হতে যাবে।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct